**ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলার পর সানা’য় আতঙ্ক ও প্রতিরোধের চিত্র**
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার পর ইয়েমেনের রাজধানী সানায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। একইসাথে, প্রতিরোধের মানসিকতাও দেখা যাচ্ছে সেখানকার সাধারণ মানুষের মধ্যে।
সম্প্রতি চালানো এই হামলায় ৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রমজান মাসের পবিত্র সময়ে এমন হামলা তাদের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে।
**সংঘাতের সূত্রপাত ও কারণ**
গত মার্চ মাসের শুরুতে, গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর ওপর ইসরায়েলের অবরোধের প্রতিবাদে, হুথি বিদ্রোহীরা (আনসার আল্লাহ নামেও পরিচিত) ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কযুক্ত জাহাজগুলোর ওপর হামলা চালানোর হুমকি দেয়। এর ফলস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা শুরু করে।
এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল হুথিদের সামরিক সক্ষমতা দুর্বল করা। তবে, আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ এতে সাধারণ মানুষের জীবনহানির ঘটনা ঘটেছে।
হুথি বিদ্রোহীরা ২০১৪ সাল থেকে সানার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। যদিও তারা এর আগে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেছিল, সম্প্রতি তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জাহাজে হামলার হুমকি দেয়।
যুক্তরাষ্ট্র একে তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হিসেবে বিবেচনা করছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুথিদের “বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে পুনরায় তালিকাভুক্ত করেছেন, যার ফলে ইয়েমেনের অর্থনীতি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
**আতঙ্ক ও উদ্বেগের কারণ**
সানা’র বাসিন্দারা এখন যুদ্ধের বিস্তার, খাদ্য সংকট এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন। অনেকে মনে করছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু মন্তব্য তাদের মধ্যে ভীতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। একটি উদাহরণ হলো, “তোমাদের ওপর এমন নরক নামিয়ে আনব, যা আগে কখনো দেখনি।”
স্থানীয়দের আশঙ্কা, গাজায় ইসরায়েলের কার্যক্রমের মতোই, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো সানাতেও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে অনেকে শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন।
**হুথিদের প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধের প্রস্তুতি**
মার্কিন বিমান হামলার বিরুদ্ধে হুথি নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন, এই ধরনের হামলা তাদের মনোবল ভাঙতে পারবে না। বরং, তারা প্রতিরোধের মাধ্যমে এর জবাব দেবে।
তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, “আমরা আক্রমণের জবাব দেবো পাল্টা আক্রমণে।” হুথিদের সমর্থকরা সানায় বিক্ষোভ করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
তাদের হাতে অস্ত্রশস্ত্র দেখা গেছে, যা তাদের প্রতিরোধের মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।
**মানবিক সংকট ও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা**
ইয়েমেনে চলমান সংঘাত সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মানবিক সংকট গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে, খাদ্য ও জ্বালানির অভাব দেখা দিয়েছে।
সাধারণ মানুষজন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট কষ্টের শিকার হচ্ছেন।
সানা’র বাসিন্দারা মনে করেন, হুথিরা সহজে আত্মসমর্পণ করবে না, এবং তাদের প্রতিপক্ষরাও, যারা সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাচ্ছে, সহজে পিছু হটবে না।
এমন পরিস্থিতিতে গৃহযুদ্ধ আরও বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা ইয়েমেনের জন্য একটি বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা