বাড়ির বাজারে সুবাতাস! সুদের হার কমার ফলে কি পরিবর্তন?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ির বিক্রি বাড়ছে, সুদের হার কমার সুফল। যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন বাজারে ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়ির বিক্রি সামান্য বেড়েছে, যা দেশটির অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত।

সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সুদের হার কিছুটা কমার ফলে ক্রেতারা আবার বাজারে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে, বাড়ির দাম এখনো বেশ চড়া, যা অনেক সম্ভাব্য ক্রেতার জন্য একটি উদ্বেগের কারণ।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের মানুষের জন্য এই খবর কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়ে আলোকপাত করা হলো।

ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যমান বাড়ির বিক্রি ৪.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ রিয়েলটরস (National Association of Realtors) -এর তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে বাড়ি বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪.২৬ মিলিয়ন ইউনিটে।

যদিও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বিক্রয় ১.২ শতাংশ কম, তবে আগের মাসের তুলনায় এটি একটি উল্লেখযোগ্য উন্নতি। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা ছিল, বিক্রয় আরো কম হবে, তবে সেই পূর্বাভাসকে ছাপিয়ে গেছে এই হিসাব।

বাড়ির দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী। ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়ির গড় দাম ছিল ৩৯৮,৪০০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার সমান (১ ডলার = ১০৪.৯৩ টাকা ধরে)।

গত এক বছরে দাম বেড়েছে ৩.৮ শতাংশ। বিগত পাঁচ বছরে এই দাম বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। অর্থাৎ, যারা আগে বাড়ি কিনেছেন, তাদের জন্য এটি সুখবর হলেও নতুন করে যারা বাড়ি কিনতে চাইছেন, তাদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন।

ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ রিয়েলটরস -এর প্রধান অর্থনীতিবিদ লরেন্স ইউন (Lawrence Yun) বলেছেন, “ক্রেতারা ধীরে ধীরে বাজারে প্রবেশ করছেন। সুদের হারে খুব বেশি পরিবর্তন না হলেও, বাজারে বাড়ির সরবরাহ বাড়ায় চাহিদা কিছুটা পূরণ হচ্ছে।”

যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ির দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় সুদের হার কমে যাওয়া। এর ফলে অনেকে কম সুদে ঋণ নিয়ে বাড়ি কিনেছিলেন।

কিন্তু বর্তমানে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে ঋণ নেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ৩০ বছর মেয়াদি বন্ধকী ঋণের গড় সুদের হার ছিল ৬.৭৬ শতাংশ। যদিও গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই হার কিছুটা কমেছিল, তবে তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

বর্তমানে সুদের হার আগের তুলনায় অনেক বেশি, যা ক্রেতাদের জন্য একটি বড় বাধা।

আবাসন বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণত চুক্তি স্বাক্ষরের এক থেকে দুই মাস পর বাড়ির বিক্রি সম্পন্ন হয়। সেই হিসেবে, সুদের হার কমার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, আসন্ন বসন্তকালে বাড়ির বিক্রি আরো বাড়তে পারে।

তবে, ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ রিয়েলটরস -এর জরিপে দেখা গেছে, ক্রেতাদের আনাগোনা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম ছিল, যদিও বিক্রেতাদের সংখ্যা বেড়েছে। লরেন্স ইউন মনে করেন, বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য সুদের হার আরো কমানো প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ মূল্যের কারণে অনেক সম্ভাব্য ক্রেতা বাড়ি কিনতে দ্বিধা বোধ করছেন। বিশেষ করে প্রথমবার বাড়ি ক্রেতাদের জন্য এই পরিস্থিতি বেশ কঠিন।

কারণ, তাদের হাতে পুরাতন বাড়ির কোনো পুঁজি থাকে না, যা নতুন বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে কাজে লাগে।

ফেব্রুয়ারি মাসে মোট বিক্রয়ের ৩১ শতাংশ ছিল প্রথমবার বাড়ি ক্রেতাদের দখলে, যা জানুয়ারিতে ছিল ২৮ শতাংশ এবং গত বছর ছিল ২৬ শতাংশ।

সাধারণত, বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য ৫ থেকে ৬ মাসের সরবরাহ থাকা প্রয়োজন। বর্তমানে এই হার ৩.৫ মাস।

লরেন্স ইউন মনে করেন, বাজারের ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে আরো ৩০ শতাংশ বাড়ির সরবরাহ বাড়াতে হবে।

ফেব্রুয়ারি মাসে নগদ অর্থে বাড়ি কেনার প্রবণতাও বেড়েছে। মোট বিক্রয়ের ৩২ শতাংশ হয়েছে নগদ অর্থে, যা জানুয়ারিতে ছিল ২৯ শতাংশ।

বাজারে বেশি সংখ্যক বাড়ির সরবরাহ থাকলে, নগদ ক্রেতাদের জন্য পছন্দের সুযোগ বাড়ে।

বর্তমানে বাজারে প্রায় ১২ লাখ ৪০ হাজার অবিক্রিত বাড়ি রয়েছে, যা জানুয়ারির তুলনায় ৫.১ শতাংশ এবং গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি।

আবাসন বাজারের এই চিত্র বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অনেক বাংলাদেশি আমেরিকায় বসবাস করেন এবং তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারের এই ধরনের পরিবর্তন বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *