কম্পিউটারে বসেই নির্ভুল আবহাওয়ার পূর্বাভাস! চাঞ্চল্যকর আবিষ্কার

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) ব্যবহার করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস তৈরি করার এক নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে, যা প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় কয়েকগুণ বেশি দ্রুত এবং অনেক কম খরচে নির্ভুল পূর্বাভাস দিতে সক্ষম। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যালান টুরিং ইনস্টিটিউট, মাইক্রোসফট রিসার্চ এবং ইউরোপীয় সেন্টার ফর মিডিয়াম-রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্টস (ECMWF)-এর গবেষকরা এই যুগান্তকারী প্রযুক্তি তৈরি করেছেন।

‘আর্ভার্ক ওয়েদার’ নামের এই নতুন পদ্ধতি আবহাওয়ার পূর্বাভাস তৈরিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বর্তমানে একটি জটিল প্রক্রিয়া, যেখানে সুপারকম্পিউটার ব্যবহার করে অনেকগুলো ধাপ সম্পন্ন করতে হয়।

প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে এবং এর জন্য বিশেষজ্ঞ দলের প্রয়োজন হয়। ‘আর্ভার্ক ওয়েদার’ এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি প্রতিস্থাপনের একটি কৌশল প্রদান করে।

এটি আবহাওয়া স্টেশন, স্যাটেলাইট, আবহাওয়া বেলুন, জাহাজ ও বিমানের মত বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া ডেটা বিশ্লেষণ করে পূর্বাভাস তৈরি করতে সক্ষম। এই ডেটা ব্যবহার করে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) সিস্টেম আবহাওয়ার প্যাটার্ন শনাক্ত করে এবং ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দিতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, এই নতুন পদ্ধতির ফলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দ্রুত, নির্ভুল এবং সাশ্রয়ী হবে। উদাহরণস্বরূপ, আফ্রিকার কৃষিকাজের জন্য তাপমাত্রা এবং ইউরোপের নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানির জন্য বাতাসের গতি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হবে।

ঐতিহ্যবাহী আবহাওয়া পূর্বাভাসের সিস্টেম তৈরি করতে যেখানে অনেক বছর সময় লাগে, সেখানে এই নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুত কাস্টমাইজড সিস্টেম তৈরি করা যাবে।

অ্যালান টুরিং ইনস্টিটিউটের পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক পরিচালক ড. স্কট হসকিং বলেছেন, এই প্রযুক্তি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস সহজলভ্য করবে এবং নীতিনির্ধারক, জরুরি পরিষেবা প্রদানকারী ও বিভিন্ন শিল্পকে সঠিক পূর্বাভাস পেতে সহায়তা করবে।

গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, বিদ্যমান সিস্টেমের মাত্র ১০ শতাংশ ডেটা ব্যবহার করেও ‘আর্ভার্ক ওয়েদার’ কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল জিএফএস পূর্বাভাস সিস্টেমের চেয়ে ভালো ফল দিতে পারে। এটি ঘূর্ণিঝড়, দাবানল এবং টর্নেডোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দিতেও সহায়ক হবে।

আবহাওয়ার এই নতুন প্রযুক্তি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সঠিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস কৃষকদের জন্য শস্য উৎপাদনের পরিকল্পনা করা, জেলেদের জন্য সমুদ্রযাত্রা নিরাপদ করা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

এছাড়াও, এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বর্ষাকালে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস উন্নত করার এই নতুন পদ্ধতি জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিশেষভাবে উপকারী হবে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *