পুরুষ ও মহিলা ক্রীড়াবিদদের মধ্যেকার বৈষম্য দূরীকরণে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে, এবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বাস্কেটবল টুর্নামেন্ট ‘মার্চ ম্যাডনেস’-এ অংশগ্রহণকারী নারী দলগুলোও আর্থিক সুবিধা পেতে শুরু করেছে। এতদিন এই সুবিধা শুধু পুরুষ দলের জন্য বরাদ্দ ছিল।
সম্প্রতি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে, নারী দলগুলোও তাদের সাফল্যের জন্য অর্থ পাবে, যা খেলাধুলা জগতে লিঙ্গ সমতাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কলেজিয়েট অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশন (এনসিএএ)-এর বাস্কেটবল টুর্নামেন্ট ‘মার্চ ম্যাডনেস’ সারা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়। প্রতি বছর এই টুর্নামেন্ট বিপুল সংখ্যক দর্শক আকর্ষণ করে এবং এর মাধ্যমে অনেক অর্থ উপার্জন হয়।
এতদিন পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে ভালো ফল করা পুরুষ দলগুলো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেত, যেমন – চার্টার্ড ফ্লাইটে ভ্রমণ, উন্নত মানের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধা। কিন্তু নারীদের দলগুলো এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতো।
তবে, খেলোয়াড় ও কোচদের দীর্ঘদিনের দাবির ফলে, এবার নারীদেরও এই সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে প্রতিটি নারী দল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের জন্য ‘ইউনিট’ হিসেবে পরিচিত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাবে।
প্রতিটি ‘ইউনিট’-এর মূল্য ১ লক্ষ ১৩ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার সমান। এই অর্থ দলগুলোর উন্নতি এবং খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে সাহায্য করবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন খেলোয়াড় ও কোচরা। অনেক নারী কোচ জানিয়েছেন, খেলাধুলায় নারী-পুরুষের মধ্যেকার বৈষম্য দূরীকরণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তারা মনে করেন, এখন নারী খেলোয়াড়দেরও পুরুষ খেলোয়াড়দের মতোই সুযোগ পাওয়া উচিত। এই পরিবর্তনের ফলে একদিকে যেমন নারীদের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বাড়বে, তেমনি ক্রীড়া জগতে নারীদের অংশগ্রহণও আরও বাড়বে।
উদাহরণস্বরূপ, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী বাস্কেটবল দলের কথা বলা যেতে পারে। দলটির কোচ মেগান গ্রিফিথ এই পরিবর্তনের প্রশংসা করে বলেছেন, “আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম, তবে এখন ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি।”
খেলোয়াড়দের মধ্যে পেরি পেইজ বলেছেন, “আমরা এখন আমাদের স্কুলের জন্য অর্থ উপার্জন করতে পারছি, এটা খুবই আনন্দের।”
এই পরিবর্তনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্কেটবল খেলোয়াড় সেডোনা প্রিন্স। ২০২০ সালে তিনি নারী ও পুরুষ দলের সুযোগ-সুবিধার মধ্যেকার পার্থক্য নিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করেছিলেন, যা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
তার সেই ভিডিওর ফলেই মূলত এই পরিবর্তনের সূচনা হয়।
নারীদের বাস্কেটবলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে, এই ধরনের পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে খেলাধুলাসহ সমাজের প্রতিটি স্তরেই নারী-পুরুষের সমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস