জাপানের ‘ব্ল্যাক এগ’: ৭ বছর বাঁচানোর চমক!

জাপানের ওহাকুডানির ‘কুরো-তামাগো’: সাত বছর বেশি বাঁচার রহস্য!

জাপানের পার্বত্য অঞ্চল হাকোনে-র ওহাকুডানি উপত্যকা, যা ‘গ্রেট বয়েলিং ভ্যালি’ নামেও পরিচিত, এক অসাধারণ স্থান। এখানকার মাটি থেকে সব সময়ই ধোঁয়া নির্গত হয়, যা আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তার প্রমাণ।

এই অঞ্চলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল ‘কুরো-তামাগো’ বা কালো ডিম, যা নাকি খেলে আয়ু সাত বছর বাড়ে!

কালো ডিম তৈরির প্রক্রিয়াও বেশ আকর্ষণীয়। ওহাকুডানির গরম ঝর্ণার পানিতে লোহার পরিমাণ বেশি। প্রথমে ডিমগুলোকে তারের ঝুড়িতে ভরে ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ করা হয়। ডিম সেদ্ধ হওয়ার সময়, পানির লোহার সঙ্গে ডিমের বাইরের অংশের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, ফলে ডিমের খোসা কালো হয়ে যায়।

এরপর ডিমগুলো ১৫ মিনিটের জন্য ভাপে রাখা হয়।

এই ডিমগুলির বাইরের রং কালো হলেও ভেতরের অংশ কিন্তু সাদা এবং কুসুম নরম থাকে। ডিমের স্বাদ সাধারণ ডিমের মতোই, তবে সামান্য সালফারের গন্ধ পাওয়া যায়।

স্থানীয়দের মতে, এই ডিম খাওয়ার আসল মজা হল এর অভিজ্ঞতায় – আগ্নেয়গিরির পাশে দাঁড়িয়ে কালো খোসা ছাড়িয়ে গরম ডিম খাওয়ার অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ।

কুরো-তামাগো-র এই ধারণা বহু পুরোনো। ১৯৫৫ সাল থেকে এখানে ডিম সেদ্ধ করে বিক্রি করা শুরু হলেও, ডিম খেয়ে সাত বছর বেশি বাঁচার ধারণা আরও অনেক আগের।

কথিত আছে, ওহাকুডানির ‘এনমেই জিজো’ নামক একটি বুদ্ধমূর্তি রয়েছে, যা দীর্ঘায়ু এবং শিশুদের রক্ষার প্রতীক। ধারণা করা হয়, এই জিজোর থেকেই এসেছে কালো ডিম খাওয়ার মাধ্যমে জীবনকালের বৃদ্ধি পাওয়ার বিশ্বাস।

জাপানি সংস্কৃতিতে সাত সংখ্যাটিকে সৌভাগ্যপূর্ণ মনে করা হয়, তাই সম্ভবত সাত বছর বেশি বাঁচার ধারণাটি এর সঙ্গে যুক্ত।

ওহাকুডানি ভ্রমণও একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা। হাকোনে-ইউমোটো বা গোরা স্টেশন থেকে বাসে চড়ে অথবা কেবল কারের মাধ্যমে এখানে যাওয়া যায়।

ওহাকুডানির প্রাকৃতিক দৃশ্য, বিশেষ করে সালফার মিশ্রিত পাথরের দৃশ্য, পর্যটকদের মন জয় করে। পরিষ্কার আকাশে এখান থেকে মাউন্ট ফুজি-র মনোরম দৃশ্যও দেখা যায়।

তবে, ওহাকুডানির পরিবেশ সব সময় নিরাপদ নাও থাকতে পারে। আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তার কারণে গ্যাস নির্গমনের মাত্রা বেড়ে গেলে এখানে প্রবেশ সীমিত করা হয়।

তাই, সেখানে যাওয়ার আগে আবহাওয়ার খবর জেনে নেওয়া ভালো। শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে, সালফারের গন্ধে অস্বস্তি হতে পারে।

কালো ডিম ওহাকুডানি কুরোতামাগোকান-এ পাওয়া যায়, যা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪:৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। যারা জাপানি সংস্কৃতির এই বিশেষ দিকটি উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য ওহাকুডানির কালো ডিম একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *