মার্কিন শিক্ষা দপ্তর: ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ! শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কী?

যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ: ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ভবিষ্যৎ কী?

যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগের (Department of Education) কার্যকারিতা নিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া একটি নির্বাহী আদেশ বর্তমানে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই আদেশের মাধ্যমে, ট্রাম্প কার্যত শিক্ষা বিভাগকে দুর্বল করার পদক্ষেপ নিয়েছেন।

১৯৭৯ সালে গঠিত হওয়া এই বিভাগটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরি এবং সারাদেশে শিক্ষা বিষয়ক ফেডারেল সহায়তা কর্মসূচিগুলো তত্ত্বাবধান করে থাকে।

বিভাগটি প্রায় ২৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট পরিচালনা করে এবং এর অধীনে প্রায় ৪,৪০০ জন কর্মী কাজ করেন। এই বিভাগের প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান, শিক্ষা বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ, গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা এবং বৈষম্য রোধে ফেডারেল শিক্ষা আইন কার্যকর করা।

এছাড়াও, বিভাগটি শিক্ষার্থীদের ঋণ বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে, যার মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ শিক্ষার্থীর জন্য অনুদান, বৃত্তি এবং ঋণের ব্যবস্থা করা হয়। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী, ইংরেজি ভাষা শিক্ষার সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থী এবং সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্যেও বিভাগটি বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে।

তবে, শিক্ষা বিভাগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দীর্ঘকাল ধরেই অনেকে প্রশ্ন তুলে আসছেন। তাদের মতে, শিক্ষার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে রাজ্য ও স্থানীয় প্রশাসনের হাতে থাকা উচিত। অন্যদিকে, এর সমর্থকেরা মনে করেন, বিভাগটি শিক্ষার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় ফেডারেল সমর্থন প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রশ্ন উঠেছে, একজন প্রেসিডেন্টের পক্ষে কি কোনো সরকারি বিভাগকে বিলুপ্ত করা সম্ভব? কোনো ক্যাবিনেট-পর্যায়ের বিভাগ বাতিল করতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু, শিক্ষা বিভাগ বাতিলের পক্ষে থাকা রক্ষণশীলরা কয়েক দশক ধরে সেই অনুমোদন আদায়ের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে ক্ষমতার বিভাজন নীতি বিদ্যমান, ফলে প্রেসিডেন্টের একার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কোনো বিভাগ বন্ধ করা সম্ভব নয়। হোয়াইট হাউজও বিষয়টি স্বীকার করেছে এবং তারা জানিয়েছে, বিভাগটি সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করার মতো প্রয়োজনীয় ভোট কংগ্রেসে তাদের নেই।

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ফলে শিক্ষা বিভাগের কার্যক্রমে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এই আদেশের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রীকে বিভাগটি পুনর্গঠন এবং কিছু কার্যক্রমের দায়িত্ব অঙ্গরাজ্যগুলোতে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে।

এই পরিবর্তনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫ কোটি শিক্ষার্থীর পরিবারে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে। তবে, এর প্রভাব কিভাবে পড়বে, তা নির্ভর করছে এই নির্দেশিকা কিভাবে কার্যকর করা হয় তার ওপর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, ফেডারেল প্রোগ্রামগুলো বিশেষ শিক্ষা, ইংরেজি ভাষা শিক্ষা এবং সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে থাকে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা প্রদানকারী ‘Individuals with Disabilities Education Act (Idea)’ -এর মতো গুরুত্বপূর্ণ আইনগুলোও এই বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়।

শিক্ষার্থীদের ঋণ বিষয়ক কার্যক্রম নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে এই খাতে প্রায় ১.৬৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ রয়েছে, যা ৪ কোটি ৩০ লক্ষেরও বেশি আমেরিকানকে প্রভাবিত করে।

যদিও হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, শিক্ষা বিভাগের ঋণ বিষয়ক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে, তবে অনুদান, বৃত্তি এবং ঋণের বিতরণে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসলে প্রায় ১ কোটি ৯০ লক্ষ কলেজ শিক্ষার্থীর ওপর তার প্রভাব পড়তে পারে। ঋণ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব কোন বিভাগে যাবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

ট্রাম্প সম্ভবত এই দায়িত্ব ট্রেজারি বিভাগ, বাণিজ্য বিভাগ অথবা ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তরের কথা ভাবছেন।

বর্তমানে ঋণ পরিশোধ করছেন এমন শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কোনো পরিবর্তন নাও আসতে পারে, তবে দায়িত্ব স্থানান্তরের কারণে তাদের প্রশ্ন করা এবং পরিশোধের বিকল্পগুলো খুঁজে বের করতে সমস্যা হতে পারে। নতুন শিক্ষার্থীদের ঋণ এবং আর্থিক সহায়তা প্রক্রিয়াকরণে এই নির্বাহী আদেশের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *