যুক্তরাষ্ট্রের খনিজ সম্পদ উৎপাদন বাড়াতে জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করলেন ট্রাম্প।
ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট, দেশটির খনিজ সম্পদ উৎপাদন বাড়াতে জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন। এই লক্ষ্যে তিনি প্রতিরক্ষা উৎপাদন আইন ব্যবহারের একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
এর মাধ্যমে ফেডারেল ভূমিগুলোতে ইউরেনিয়াম, তামা, পটাশ এবং সোনার মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের অনুসন্ধান ও উন্নয়ন আরও দ্রুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো চীনসহ অন্যান্য দেশগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের খনিজ সম্পদের জন্য যে নির্ভরশীলতা রয়েছে, তা কমানো। কারণ, অনেক গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণে চীন বর্তমানে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে আছে।
আদেশ অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা বিভাগের সচিবকে অন্যান্য বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিরক্ষা উৎপাদন আইন ব্যবহারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে জরুরি পরিস্থিতিতে শিল্প উৎপাদনকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ থাকে।
১৯৫০ সালে কোরিয়ান যুদ্ধের সময় উৎপাদন চাহিদা মেটাতে এই আইন পাস করা হয়েছিল। এছাড়া, ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারীর শুরুতে ট্রাম্প এই আইনের প্রয়োগ করেছিলেন।
নতুন নির্বাহী আদেশে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থার প্রধানদের, জাতীয় জ্বালানি আধিপত্য কাউন্সিলের প্রধানের সঙ্গে সমন্বয় করে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খনিজ উৎপাদন প্রকল্পগুলো চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলো দ্রুত অনুমোদন অথবা অনুমতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
আদেশে বলা হয়েছে, “আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটা খুবই জরুরি যে যুক্তরাষ্ট্র দ্রুততম সময়ে খনিজ পদার্থের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।”
আদেশের ১০ দিনের মধ্যে, ট্রাম্পের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র সচিবকে ফেডারেল ভূমিগুলোর একটি তালিকা দিতে বলা হয়েছে। যেখানে খনিজ পদার্থের মজুদ রয়েছে এবং খনিজ উৎপাদন ও খনি-সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে প্রধান ভূমি ব্যবহার হিসেবে চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়াও, ট্রাম্পের এই আদেশে স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, কৃষি ও জ্বালানি বিভাগের প্রধানদেরকে যত দ্রুত সম্ভব সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে, যেখানে বেসরকারি খনিজ উৎপাদন কার্যক্রম চালানো যেতে পারে।
এই মাসের শুরুতে কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প এই পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও বিরল মৃত্তিকা উৎপাদনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর জন্য ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেব।”
এছাড়াও, ক্ষমতা গ্রহণের দিন ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যেখানে উচ্চ জ্বালানি মূল্যের কারণে আমেরিকান জনগণের জন্য একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় খনিজ সম্পদ উৎপাদন বাড়ানোর এই পদক্ষেপকে ন্যাশনাল মাইনিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও সিইও রিচ নোলান স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমেরিকান খনিজ শিল্পের উন্নতি “জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য”।
এই চুক্তির অংশ হিসেবে ট্রাম্প ইউক্রেনের সঙ্গে বিরল মৃত্তিকা খনিজ পদার্থ বিষয়ক একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছেন। যদিও গত মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ওভাল অফিসের বৈঠকে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি।
উল্লেখ্য, খনিজ পদার্থের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ানো একটি দ্বিদলীয় লক্ষ্য। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক পরিকল্পনাতেও এর গুরুত্ব ছিল।
তথ্য সূত্র: সিএনএন