ক্রিস্টিন কোভেন্ট্রি, যিনি কিনা বিশ্ব ক্রীড়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি, তাঁর নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পরেই বেশ কয়েকটি কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। ৪১ বছর বয়সী এই নারী এখন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) প্রেসিডেন্ট।
তাঁর নতুন পদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সামলানোর ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম প্রশ্নের জবাবে কোভেন্ট্রি জানান, “আমি ২০ বছর বয়স থেকেই উচ্চ পদে থাকা কঠিন মানুষদের সামলে আসছি। আমি যা শিখেছি, তা হলো যোগাযোগের গুরুত্ব।
আমরা আমাদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হব না। সংহতি বজায় রাখব এবং অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জনকারী প্রত্যেক ক্রীড়াবিদ যাতে নিরাপদে গেমসে অংশ নিতে পারে, তা নিশ্চিত করব।”
এই উত্তর বুঝিয়ে দেয়, কোভেন্ট্রি হয়তো নতুন, কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি প্রস্তুত। ট্রাম্প, পুতিন বা শি-এর মতো নেতাদের সামলানো থেকে শুরু করে খেলাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা বা অস্থির সময়ে আইওসি-কে সঠিক পথে চালিত করার মতো কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে তিনি পিছপা হবেন না।
প্যারিস অলিম্পিকে বক্সিংয়ে নারী ক্রীড়াবিদদের সুরক্ষা নিয়ে বিতর্কের পর তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, “নারী ক্রীড়াবিদ এবং তাদের অধিকার রক্ষায় আমরা কাজ করব।
আন্তর্জাতিক ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে, যা সবকিছু পর্যালোচনা করবে।”
জিম্বাবুয়ের রাজনীতির জটিল ময়দানেও কোভেন্ট্রি নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন। ২০০৪ সালের এথেন্স অলিম্পিকে সাঁতারে তিনটি পদক জিতে তিনি পরিচিতি পান।
এরপর ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকেও তিনি আরও চারটি পদক জয় করেন। তবে, সে সময় জিম্বাবুয়ের মানুষ যখন চরম খাদ্য সংকটে ভুগছিল, তখন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পুরস্কার হিসেবে পাওয়া ১ লাখ মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি) গ্রহণ করায় তিনি সমালোচিত হন।
রাজনৈতিক অঙ্গনেও কোভেন্ট্রির পদচারণা ছিল। ২০১৮ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট এমারসন মানাঙ্গাগওয়ার মন্ত্রিসভায় ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যদিও জিম্বাবুয়ের স্টেডিয়ামগুলো নিরাপদ না হওয়ায় দেশটির জাতীয় দলগুলোকে ২০২২ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দেয় কনফেডারেশন অফ আফ্রিকান ফুটবল।
ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে কোভেন্ট্রি এই সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হন। প্যারিস অলিম্পিকে জিম্বাবুয়ে ৯ জন ক্রীড়াবিদের জন্য ৭৪ জন প্রতিনিধি পাঠায়, যা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, জনগণের অর্থ কতটা ভালোভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কোভেন্ট্রি সরকারের ভূমিকা এবং তাঁর নেওয়া পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, “আমি চেয়েছি আমার দেশের জন্য ভেতরের থেকে পরিবর্তন আনতে। সমালোচনার শিকার হয়েছি, তবে তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
কারণ আমি মনে করি, শুধু দাঁড়িয়ে থেকে পরিবর্তনের জন্য চিৎকার করলে কোনো লাভ হয় না। বরং আলোচনার টেবিলে বসতে হয়।”
২০১৩ সালে কোভেন্ট্রি আইওসিতে যোগ দেন এবং দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন। তিনি তাঁর পূর্বসূরি থমাস বাখের পছন্দের উত্তরসূরি ছিলেন। তাঁর প্রচারণার জন্য কোনো ব্যয়বহুল জনসংযোগ দল ছিল না।
এমনকি তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারও তিনি এবং তাঁর স্বামী মিলে তৈরি করেন। তবে বাখের সমর্থন তাঁর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাখের সময়েই আইওসির দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এখন প্রশ্ন হলো, কোভেন্ট্রির এই নতুন পথচলা কেমন হবে? তিনি কি বাখের কর্তৃত্ববাদী ধারা বজায় রাখবেন, নাকি পরিবর্তন আনবেন?
আগামী আট বছর ক্রীড়া বিশ্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান