দক্ষিণ আফ্রিকার একটি গবেষণা কেন্দ্রে কর্মীদের মধ্যে মারামারি ও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার জেরে অ্যান্টার্কটিকায় অবস্থিত দক্ষিণ আফ্রিকার ‘ন্যাশনাল অ্যান্টার্কটিক এক্সপেডিশন (SANAE) IV’ ঘাঁটির এক কর্মীর মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।
কর্মীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়ার পরই কর্তৃপক্ষ এই ব্যবস্থা নিয়েছে।
সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ওই ঘাঁটির এক কর্মী কর্তৃপক্ষের কাছে একটি ই-মেইল পাঠান। যেখানে তিনি তাঁর সহকর্মীর বিরুদ্ধে শারীরিক নিগ্রহ, প্রাণনাশের হুমকি এবং যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন।
ই-মেইলে ওই ব্যক্তি দ্রুত সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন।
জানা গেছে, কর্মীদের মধ্যে একটি কাজ নিয়ে মতবিরোধের জেরেই এই ঘটনার সূত্রপাত। আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল একটি কাজ সময় মতো করতে না চাওয়ায় দলের প্রধানের সঙ্গে অভিযুক্ত কর্মীর বচসা হয়।
এর পরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
আফ্রিকা থেকে প্রায় ৪,০০০ কিলোমিটার দূরে, কুইন মড ল্যান্ড অঞ্চলের প্রান্ত থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার ভেতরে অ্যান্টার্কটিকার এই ঘাঁটিটি অবস্থিত। উজ্জ্বল কমলা রঙের তিনটি মডিউল নিয়ে গঠিত এই ঘাঁটিটি একটি পাথুরে জমির ওপর তৈরি করা হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা ১৯৬০ সাল থেকে সেখানে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, জলবায়ু গবেষণা, এবং ভূতাত্ত্বিক জরিপের মতো বৈজ্ঞানিক কাজ করে আসছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল অ্যান্টার্কটিক প্রোগ্রামের (SANAP) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সেখানে নয় জন কর্মী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন চিকিৎসক, কয়েকজন বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীও রয়েছেন।
চলতি বছরের ১লা ফেব্রুয়ারি এই দলটি সেখানে যায়। দলের নেতৃত্বে রয়েছেন টেকনিশিয়ান এমবুলাহেনি কেলসি মাওওয়াশে।
কর্মীদের ১৩ মাস সেখানে থাকার কথা। আগামী ডিসেম্বরে তাদের জন্য রসদ সরবরাহ করা হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশ বিভাগ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং ঘাঁটিতে স্বাভাবিক সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।
অভিযুক্ত কর্মীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর তদন্ত চলছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি বর্তমানে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন এবং নিজের আচরণের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন।
কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।
কর্মীরা সাধারণত চরম প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে অভ্যস্ত। তার ওপর বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাঁদের দীর্ঘদিন থাকতে হয়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কর্মীদের এই ধরনের পরিবেশে মানিয়ে নিতে কিছু সমস্যা হতে পারে। তবে তার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল।
অ্যান্টার্কটিকায় বর্তমানে প্রায় ৭০টি স্থায়ী গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। বিভিন্ন দেশ এই কেন্দ্রগুলো পরিচালনা করে থাকে।
এই কেন্দ্রগুলোতে সারা বছর অথবা অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত গবেষণা চলে। এই সময়ে পশু-পাখিদের আনাগোনা বাড়ে।
অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫৯ সালের অ্যান্টার্কটিক চুক্তি এই অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষার জন্য গবেষণা এবং দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা নিশ্চিত করে।
শীতকালে এই স্টেশনগুলোতে প্রায় ১,২০০ জন এবং গ্রীষ্মকালে প্রায় ৪,০০০ জন কর্মী কাজ করেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা