আফগানিস্তানে দুই বছরের বেশি সময় ধরে বন্দী থাকা এক মার্কিন নাগরিককে অবশেষে মুক্তি দিয়েছে তালেবান সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, আটলান্টার বাসিন্দা জর্জ গ্লেজম্যান নামের ওই ব্যক্তিকে মুক্তি দিতে কাতারের মধ্যস্থতা চেয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
ডিসেম্বর ২০২২ এ আফগানিস্তানে ঘুরতে গিয়ে তালেবানের হাতে বন্দী হন ৬৬ বছর বয়সী গ্লেজম্যান। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে জানান, গ্লেজম্যান এখন যুক্তরাষ্ট্রের পথে রয়েছেন এবং খুব শীঘ্রই তিনি তার স্ত্রী আলেকজান্দ্রার সঙ্গে মিলিত হবেন।
কাতারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রুবিও বলেন, “জর্জের মুক্তি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।” একইসঙ্গে তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আফগানিস্তানে এখনো অন্যান্য আমেরিকান বন্দী রয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের মুক্ত করতে অবিরাম কাজ করে যাবেন।”
গ্লেজম্যানকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় কাতারের রাজধানী দোহায় তার সঙ্গে ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বন্দী বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যাডাম বোহলার। তালেবান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বোহলারের সঙ্গে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়েছে।
জানা গেছে, গ্লেজম্যান বিশ্বের একশোর বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকে তিনি আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন।
তালেবান সরকার এই মুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছে। উল্লেখ্য, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহার করার পর অনেক দেশ এখনো তালেবানের শাসনকে স্বীকৃতি দেয়নি।
এর আগে, জানুয়ারিতে বাইডেন প্রশাসনের শেষ সময়ে কাতারের মধ্যস্থতায় আরও দুই মার্কিন নাগরিক— রায়ান করব্যাট এবং উইলিয়াম ম্যাককেন্টকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
তবে, জর্জ গ্লেজম্যানের মুক্তির বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো বন্দীকে মুক্তি দেয়নি। আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মানবিক কারণে এই মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
তারা আরও বলেছে, “ইসলামিক আমিরাত আবারও সংলাপ, বোঝাপড়া এবং কূটনীতির মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধানে আগ্রহী।”
এর আগে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকাকালীন গুয়ান্তানামো বে’তে বন্দী থাকা মোহাম্মদ রহিম নামের এক বন্দীর বিনিময়ে গ্লেজম্যানসহ অন্যান্য আমেরিকানদের মুক্তির প্রস্তাব বিবেচনা করেছিলেন। তবে, বাইডেন জানান, তালেবান যদি আফগান-মার্কিন ব্যবসায়ী মাহমুদ হাবিবীকে মুক্তি না দেয়, তবে তিনি রহিমকে মুক্তি দিতে রাজি নন।
হাবিবীকে ২০২২ সালে তালেবান বাহিনী অপহরণ করেছে বলে ধারণা করা হয়।
মাহমুদ হাবিবীর পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তাদের কাছে এমন প্রমাণ আছে যে হাবিবীকে তালেবান নিরাপত্তা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। হাবিবীর এক ভাই আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা আত্মবিশ্বাসী যে ট্রাম্প প্রশাসন আমার ভাইয়ের মুক্তির জন্য কাজ করবে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়া যায়।”
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।