ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান সামরিক শক্তিধর দেশগুলো অদূর ভবিষ্যতে নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব আরও বাড়াতে একটি পরিকল্পনা তৈরি করছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, সামরিক জোট ন্যাটো-তে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তাদের নির্ভরতা কমানো।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানা গেছে। খবর অনুযায়ী, এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেবার একটি কাঠামো তৈরির চেষ্টা চলছে।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং নর্ডিক দেশগুলো এই আলোচনা প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই এর একটি কাঠামো তৈরি করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউরোপীয় কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ফিনান্সিয়াল টাইমস (FT) পত্রিকা বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে।
অন্যদিকে, ব্লুমবার্গ নিউজ জানিয়েছে, ন্যাটো খুব সম্ভবত ইউরোপ ও কানাডাকে তাদের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের মজুত ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে বলবে। কারণ হিসেবে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোটের রাজনৈতিক মতবিরোধ এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ন্যাটো থেকে বেরিয়ে আসার হুমকির প্রেক্ষাপটে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
এফটি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই আলোচনার মূল লক্ষ্য হলো, কোনো কারণে যুক্তরাষ্ট্র যদি একতরফাভাবে ন্যাটো থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়, তাহলে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা। কারণ, গত প্রায় ৮০ বছর ধরে এই সামরিক জোট ইউরোপের নিরাপত্তা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
বর্তমানে, ন্যাটো’র বার্ষিক ব্যয়ের ১৫.৮ শতাংশ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া, ইউরোপে তাদের প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ সেনা মোতায়েন রয়েছে।
ফলে, মহাদেশটির নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো এরই মধ্যে তাদের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় এবং সামরিক বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এফটি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় দেশগুলোর সামরিক সক্ষমতা এমন পর্যায়ে উন্নীত করতে পাঁচ থেকে দশ বছর সময় লাগতে পারে, যেখানে তারা যুক্তরাষ্ট্রের অনেক দায়িত্ব নিতে পারবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে অনেক কর্মকর্তা মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো শুধু কথার কথা বলছেন, ন্যাটো থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আনার তার তেমন কোনো ইচ্ছা নেই। আবার কেউ কেউ মনে করেন, ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের উপর কতটা আস্থা রাখা যায়, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
২০২৩ সালের নভেম্বরে ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এবং চলতি বছর পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর, ইউরোপীয় দেশগুলো প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি এবং তাদের সামরিক অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে শুরু করেছে। এর কারণ হিসেবে রাশিয়া থেকে আসা ক্রমবর্ধমান চাপকে দেখা হচ্ছে।
ব্লুমবার্গ আরও জানিয়েছে, আগামী দিনগুলোতে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, সরবরাহ ব্যবস্থা, যোগাযোগ ও তথ্য ব্যবস্থা এবং স্থল যুদ্ধের সক্ষমতার ওপর জোর দেওয়া হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল মিত্রদের আরও বেশি সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা