সৌদি আরবে ২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়াম নির্মাণকালে এক প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আরশাদ, যিনি পাকিস্তানের নাগরিক ছিলেন।
গত ১২ই মার্চ, আল খোবারের আরামকো স্টেডিয়ামে কাজ করার সময় তিনি উপর থেকে পড়ে যান এবং গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে মারা যান। এই ঘটনায় আরশাদের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
জানা গেছে, জনাব আরশাদ ছিলেন তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর পরিবারে স্ত্রী এবং দুই থেকে সাত বছর বয়সী তিনজন সন্তান রয়েছে।
পিতার মৃত্যুর পর পরিবারটি এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। আরশাদের বাবা, মোহাম্মদ বশির, সংবাদমাধ্যমকে জানান, “আমরা যেন আকাশ থেকে মাটিতে পরে গেছি। পুরো পরিবার শোকে পাথর।”
বেলজিয়ামের নির্মাণ সংস্থা বেসিক্স গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান, সিক্স কনস্ট্রাক্ট, আরামকো স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত। এই কোম্পানি এক বিবৃতিতে আরশাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বিবৃতিতে তারা জানায়, তিনজন শ্রমিক একটি উঁচু স্থানে কাজ করছিলেন, যেখানে তাদের কংক্রিট তৈরির কাজ চলছিল। তাঁদের মধ্যে দু’জন নিরাপত্তা সরঞ্জামের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, কিন্তু আরশাদ একটি অ্যাংকর পয়েন্টের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারেননি।
এর ফলেই এই দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর জরুরি বিভাগের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, তবে হাসপাতালে নেওয়ার পর আরশাদের মৃত্যু হয়।
সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর কর্মীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনের ভিডিও এবং ছবি মুছে ফেলতে বলা হয় এবং এই বিষয়ে কারো সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়। বেসিক্স গ্রুপ জানিয়েছে, তারা নিহত ব্যক্তির পরিবারের প্রতি সম্মান জানিয়ে কর্মীদের সামাজিক মাধ্যমে দুর্ঘটনার ছবি শেয়ার করতে নিষেধ করেছে।
কোম্পানিটি আরও জানায়, কর্তৃপক্ষের তদন্তে তারা সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে এবং এই দুঃখজনক ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধানে সহায়তা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, আরশাদের মরদেহ মঙ্গলবার পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমের গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয় এবং সেখানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।
আরামকো স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে, যেখানে হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিক কাজ করছেন। এদের মধ্যে অনেকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাগরিক।
সাধারণত শ্রমিকেরা দুটি শিফটে কাজ করেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে বিশ্বকাপ সংশ্লিষ্ট নির্মাণ প্রকল্পে শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসছে।
তাঁদের অভিযোগ, শ্রমিকদেরকে মারাত্মক ঋণের বোঝা নিয়ে আসতে হয় এবং তাঁদের বেতনও অনেক সময় পরিশোধ করা হয় না। এছাড়াও, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হয়, যা তাঁদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর।
এই ঘটনার পর, মানবাধিকার সংগঠনগুলো আবারও শ্রমিকদের সুরক্ষা এবং তাঁদের প্রতি ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছে, বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টের সঙ্গে জড়িত নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে শ্রমিকদের জীবন ও সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।