কেনিয়ার ‘হ্যান্ডশেক’ রাজনীতি: সমঝোতার মোড়কে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার কৌশল। কেনিয়ার রাজনীতিতে ‘হ্যান্ডশেক’-এর ধারণাটি বেশ পরিচিত।
আপাতদৃষ্টিতে পরস্পরের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির একটি সমঝোতাকে এটি নির্দেশ করে। প্রায়শই দেখা যায়, কোনো নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর দলগুলো এই ধরনের চুক্তিতে আসে।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি মূলত রাজনৈতিক অভিজাতদের ক্ষমতা ধরে রাখার একটি কৌশল, যা দেশের বৃহত্তর পরিবর্তন এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় থেকেই এই ‘হ্যান্ডশেক’ রাজনীতির সূত্রপাত। ব্রিটিশরা স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ক্ষমতা প্রত্যাশীদের নিজেদের পক্ষে টেনে এনে উপনিবেশ টিকিয়ে রাখতে তাদের সঙ্গে গোপন চুক্তি করত।
স্বাধীনতার প্রাক্কালে, কুখ্যাত মাউ মাউ বিদ্রোহের নেতা জোমো কেনিয়াটার সঙ্গেও একই ধরনের চুক্তি করে ব্রিটিশ সরকার। স্বাধীনতা লাভের পর, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নিতে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ‘হ্যান্ডশেক’-এর প্রবণতা বাড়ে।
অভিজ্ঞ সাংবাদিক চার্লস ওবোর মতে, এই ধরনের সমঝোতা “প্রত্যেক রাজনীতিবিদকে কিছু না কিছু ‘খাওয়ার’ সুযোগ করে দেয়”।
অতীতে, এই ‘হ্যান্ডশেক’ কেনিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে, বিশেষ করে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর সহিংসতার অবসানে এর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
তবে সমালোচকদের মতে, এর ফলে রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি আরো বেড়েছে, যা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
কেনিয়ার ‘হ্যান্ডশেক’ রাজনীতির অন্যতম পরিচিত চরিত্র হলেন রাইলা ওদিঙ্গা। তিনি বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতার ভাগাভাগি করতে একাধিক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সমঝোতা করেছেন।
যেমন, ২০০০ সালে তিনি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল আrap মোই-এর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। এরপর ২০০৮ সালে মুয়াই কিবাকি এবং ২০১৮ সালে উহুরু কেনিয়াটার সঙ্গেও তার সমঝোতা হয়।
সম্প্রতি, বর্তমান প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর দলের সঙ্গে ওদিঙ্গার দলের একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে। অনেকে মনে করেন, ২০১৮ সালের চুক্তিতে রুটোকে কোণঠাসা করা হয়েছিল, যেখানে কেনিয়াটা রাইলাকে তার উত্তরসূরি হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন।
যদিও সেই সমঝোতা সফল হয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘হ্যান্ডশেক’ রাজনীতির এই নতুন সংস্করণে রুটোর রাজনৈতিক বৈধতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
কারণ, ওদিঙ্গার রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা আগের তুলনায় কমে গেছে। বস্তুত, কেনিয়ার রাজনীতিতে এখন একটি নতুন প্রজন্মের উত্থান হচ্ছে, যারা ‘হ্যান্ডশেক’ রাজনীতির এই ধারাকে প্রত্যাখ্যান করছে।
তাদের মূল লক্ষ্য হলো জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি সমাজ গড়ে তোলা। তথ্য সূত্র: 
 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
				
			 
				
			 
				
			 
				
			