টেসলার ভবিষ্যৎ: মাস্কের নীরবতা, ডুবন্ত শেয়ার!

টেসলার সংকট: মনোযোগ হারাচ্ছেন ইলন মাস্ক?

বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান টেসলার (Tesla) জন্য সময়টা ভালো যাচ্ছে না। একদিকে যেমন বিশ্বজুড়ে তাদের গাড়ির বিক্রি কমছে, তেমনই তাদের শেয়ারের দামও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।

সম্প্রতি তাদের বহুল আলোচিত সাইবারট্রাক (Cybertruck) মডেলের কিছু যন্ত্রাংশ খুলে যাওয়ার কারণে তা ফেরত (recall) নেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও, কোম্পানির ব্র্যান্ড ইমেজ নিয়েও দেখা দিয়েছে সংকট।

শেয়ার বাজারে টেসলার পারফরম্যান্স এখন পর্যন্ত এই বছরের সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে। ফিনান্সিয়াল টাইমসের একটি বিশ্লেষণ অনুযায়ী, কোম্পানির হিসাবের খাতায় প্রায় ১.৪ বিলিয়ন ডলারের হিসাব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এক সময়ের পরিবেশ-সচেতন, প্রগতিশীলদের পছন্দের ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত টেসলা, বর্তমানে ডানপন্থী মহলে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে, যা তাদের ব্র্যান্ড পরিচিতিকে নতুন দিকে মোড় দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেসলার এই খারাপ অবস্থার জন্য মূলত দায়ী এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) ইলন মাস্কের (Elon Musk) মনোযোগের অভাব।

বিনিয়োগকারীরা, এমনকি টেসলার একনিষ্ঠ সমর্থকরাও, মাস্কের উপর দ্রুত ধৈর্য হারাচ্ছেন।

শেয়ার বাজারের বিশ্লেষক ড্যান আইভেস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “টেসলা একটি সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র ব্যক্তি হলেন মাস্ক।”

তিনি আরও বলেন, “টেসলা মানেই মাস্ক, এবং মাস্কই টেসলা। এই দুটিকে আলাদা করা যায় না।”

কিন্তু প্রশ্ন হলো, টেসলার এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মাস্ক কোথায়?

বিশ্লেষকদের মতে, মাস্ক এখন তার অন্যান্য প্রকল্পে বেশি সময় দিচ্ছেন, বিশেষ করে ক্রিপ্টোকারেন্সি ডজকয়েন (DOGE)-এর দিকে তার ঝোঁক বেশি।

আরেকজন প্রধান বিনিয়োগকারী, রস Gerber, সম্প্রতি বলেছেন, মাস্ক “পুরোপুরিভাবে টেসলাকে উপেক্ষা করছেন”।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাস্কের এমন আচরণ বিনিয়োগকারীদের হতাশ করছে।

অতীতে, মাস্কের বিতর্কিত কিছু মন্তব্য ও কাজের পরেও বিনিয়োগকারীরা তাকে সমর্থন করেছেন, কারণ টেসলা ছিল তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে।

কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।

যদিও টেসলা এখনও আমেরিকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় বৈদ্যুতিক গাড়ির নির্মাতা, তারা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রুত মার্কেট শেয়ার হারাচ্ছে।

এর প্রধান কারণ হলো বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা এবং টেসলার উদ্ভাবনে ঘাটতি।

এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেছেন, যার ফলে গত কয়েক মাসে টেসলার শেয়ারের দাম অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে।

মাস্কের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

এমনকি, প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও টেসলার শেয়ারের দর পতন ঠেকাতে পারছেন না।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে সরাসরি দর্শকদের টেসলার শেয়ার কেনার আহ্বান জানান, যা সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত নৈতিক বিধি-নিষেধের পরিপন্থী ছিল।

তবে, তার এই আহ্বানেও খুব একটা কাজ হয়নি, বরং বাজারে টেসলার শেয়ারের দর আরও কমে যায়।

সব মিলিয়ে, টেসলার সংকট ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে, এবং এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে ইলন মাস্কের মনোযোগের অভাব ও কোম্পানির প্রতি তার উদাসীনতা।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *