হিথ্রোর বিদ্যুৎ বিভ্রাট: হাজারো যাত্রীর দুর্ভোগ, বন্ধ বিমানবন্দরে!

লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের জেরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা, বাতিল কয়েক হাজার ফ্লাইট। শুক্রবার (২২শে মার্চ) সকালে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিমানবন্দরের কাছে একটি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনে আগুন লাগার ফলে এই বিপর্যয় সৃষ্টি হয়, যার জেরে হাজার হাজার বিমানযাত্রীর ভ্রমণ চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। হিথরোর এই অচলাবস্থা কবে কাটবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছে, উত্তর হাইড, হেইজে অবস্থিত একটি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের কারণে পাওয়ার গ্রিডে সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হয়েছে। শনিবার (২৩শে মার্চ) সকালের আগে বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

বিমান চলাচল বিষয়ক বিশ্লেষক অ্যালেক্স ম্যাকারাস আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এই ঘটনার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কয়েক দিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।”

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে হিথরো থেকে ছেড়ে যাওয়া এবং সেখানে অবতরণ করার কথা থাকা ফ্লাইটগুলো এমস্টারডাম, ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং ম্যানচেস্টারের মতো বিমানবন্দরে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

হিথরো বিমানবন্দরের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “যাত্রী ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২১শে মার্চ রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত হিথরো বিমানবন্দর বন্ধ থাকবে। এই সময়ে যাত্রীদের বিমানবন্দরে আসতে নিষেধ করা হচ্ছে।”

জানা গেছে, বিমানবন্দরের কাছে একটি সাবস্টেশনে আগুন লাগার কারণে এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়। অগ্নিকাণ্ডের ফলে লন্ডনের পশ্চিমাঞ্চলে হাজার হাজার আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন।

বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকা অনেক যাত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়েছেন। ব্রাসেলস এয়ারের একটি ফ্লাইটের যাত্রী ৭৪ বছর বয়সী মারেয়া জানান, বিমানবন্দরে পৌঁছে তিনি অন্ধকারে ছিলেন এবং সেখানে কোনো কর্মী না থাকায় কী ঘটছে, তা বুঝতে পারছিলেন না।

অন্যান্য যাত্রীরাও তাঁদের টিকিটের মূল্য ফেরত পেয়েছেন। এক যাত্রী জানান, তিনি তাঁর ৩০তম জন্মদিনের উপহার হিসেবে ভেনিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার কথা ছিল। কিন্তু বিমান বাতিল হওয়ায় তাঁরা যেতে পারেননি।

যুক্তরাজ্যের জ্বালানি সচিব এড মিলিব্যান্ড এক রেডিও সাক্ষাৎকারে বলেন, “এই ঘটনার পেছনে কোনো অশুভ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মনে হয় না।”

উল্লেখ্য, হিথরো বিমানবন্দরটি যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে ব্যস্ত বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে প্রতিদিন প্রায় ১,৩০০ ফ্লাইট ওঠানামা করে এবং বছরে প্রায় ৬ কোটি ৭০ লক্ষ যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করেন।

ফ্লাইট রাডার ২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, এই ঘটনায় অন্তত ১,৩৫৭টি ফ্লাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬৭৯টি ফ্লাইট হিথরোতে অবতরণ করার কথা ছিল, এবং ৬৭৮টি ফ্লাইট এখান থেকে উড্ডয়নের কথা ছিল।

ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের পক্ষ থেকে তাদের যাত্রীদের হিথরোর উদ্দেশ্যে যাত্রা না করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *