অদম্য ইচ্ছাশক্তির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ব্রিটিশ রেসিং ড্রাইভার বিলি মঙ্গার। ২০১৭ সালে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় দুই পা হারানো এই তরুণ, সম্প্রতি হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অনুষ্ঠিত ‘আয়রনম্যান’ প্রতিযোগিতায় বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে, তিনি প্রমাণ করেছেন, মানুষের অদম্য সাহস ও ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
ফর্মুলা ফোর রেসিংয়ে অংশ নেওয়ার সময় এক মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হন বিলি। গুরুতর আহত অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও, তার দুটো পা-ই কেটে ফেলতে হয়।
জীবন যখন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি, তখন অনেকেই হয়তো হতাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু বিলি মঙ্গারের মনোবল ছিল আকাশছোঁয়া। তিনি ভেঙে না পড়ে, নতুন করে জীবন শুরু করার স্বপ্ন দেখেন।
আয়রনম্যান প্রতিযোগিতা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন ক্রীড়া ইভেন্টগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই প্রতিযোগিতায় একজন প্রতিযোগীকে সাঁতার, সাইক্লিং এবং ম্যারাথন দৌড়—এই তিনটি বিভাগে অংশ নিতে হয়।
বিলি মঙ্গার ১৪০.৬ মাইল দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দিয়েছেন ১৪ ঘণ্টা ২৩ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডে। যা ডাবল-অ্যাম্পিউটি (উভয় পা-বিহীন) ক্যাটাগরিতে একটি বিশ্বরেকর্ড।
এর আগে এই বিভাগে দ্রুততম সময়ে আয়রনম্যান শেষ করার রেকর্ড ছিল আরও দুই ঘণ্টার বেশি।
বিলি মঙ্গারের এই অসাধারণ সাফল্যের পেছনে রয়েছে এক বছরের কঠোর প্রশিক্ষণ। পেশাদার প্রশিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে তিনি প্রতিদিন অনুশীলন করেছেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও, তিনি সাইকেলের প্যাডেল ঘোরানো থেকে শুরু করে দৌড়—সবকিছুতেই নতুন করে দক্ষতা অর্জন করেছেন। সাঁতারের সময় শরীরের উপরের অংশের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তিনি উল্লেখযোগ্য গতি অর্জন করেন।
শুধু নিজের জন্য নয়, বিলি মঙ্গার এই আয়োজন করেছেন একটি মহৎ উদ্দেশ্যে। তাঁর এই বিশ্বরেকর্ড গড়ার পেছনে ছিল দাতব্য সংস্থা ‘কমি সেফটি’র জন্য অর্থ সংগ্রহ করা, যারা বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য দূরীকরণে কাজ করে।
বিলি বলেন, “এই সাফল্যের মাধ্যমে আমি আমার পরিবার, বন্ধু এবং চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চেয়েছি, যারা আমাকে এই কঠিন সময়ে সমর্থন জুগিয়েছেন।”
বর্তমানে বিলি মঙ্গারের পরবর্তী লক্ষ্য হলো ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস প্যারালিম্পিকসে প্যারা-ট্রায়াথলনে গ্রেট ব্রিটেন দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা। তিনি বিশ্বাস করেন, কঠোর পরিশ্রম ও একাগ্রতা থাকলে, এই স্বপ্নও পূরণ করা সম্ভব।
বিলি মঙ্গারের এই জয় শুধু তাঁর একার নয়, বরং এটি সকল প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য এক বিশাল অনুপ্রেরণা। তাঁর এই সাফল্যের গল্প, সমাজের চোখে প্রতিবন্ধকতাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে।
তিনি দেখিয়েছেন, মানুষ চাইলে অসম্ভবকেও জয় করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন