আত্নঘাতী বোয়িং কর্মীর পরিবার: প্রতিশোধের আগুনে!

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান প্রস্তুতকারক বোয়িং কোম্পানির বিরুদ্ধে তাদের এক প্রাক্তন কর্মীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই কর্মী, জন বার্নেট, যিনি বিমানের নিরাপত্তা ত্রুটি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন, আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা যায়।

তাঁর পরিবারের অভিযোগ, বোয়িং কর্তৃপক্ষের হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের কারণেই বার্নেটের এই পরিণতি হয়েছে।

বার্নেট বোয়িং কোম্পানিতে কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৭ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

কর্মজীবনে থাকাকালীন সময়ে, তিনি বিমানের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বেশ কিছু গুরুতর ত্রুটি কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, বিমানের গুরুত্বপূর্ণ তারের কাছাকাছি ধাতব টুকরা পড়ে থাকতে দেখা যেত, যা গুরুতর দুর্ঘটনার কারণ হতে পারতো।

এছাড়াও, বোয়িং ৭৮৭ মডেলের বিমানে ব্যবহৃত অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, এই বিমানের প্রায় এক-চতুর্থাংশ অক্সিজেন সিস্টেম ত্রুটিপূর্ণ ছিল।

বার্নেট তাঁর উদ্বেগের কথা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালেও, কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি। বরং, তাঁর অভিযোগ, এরপর থেকে তিনি কর্তৃপক্ষের হয়রানির শিকার হন।

তাঁর পরিবারের অভিযোগ, বার্নেটকে ইচ্ছাকৃতভাবে খারাপ মূল্যায়ন এবং কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ দেওয়া হতো। তাঁর সহকর্মীদের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে ভুল ধারণা তৈরি করা হয়েছিল এবং অন্য প্ল্যান্টে বদলি হতেও বাধা দেওয়া হয়।

বার্নেটের মানসিক স্বাস্থ্যও দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে এবং তিনি অবশেষে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি)-এ আক্রান্ত হন।

২০২৪ সালের ৯ই মার্চ, সাউথ ক্যারোলাইনার চার্লসটনে আইনজীবীদের জিজ্ঞাসাবাদের কয়েকদিন পর, ৬২ বছর বয়সী জন বার্নেট আত্মহত্যা করেন।

তাঁর পরিবার এখন বোয়িং কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বার্নেটের মানসিক কষ্টের জন্য ক্ষতিপূরণ, কর্মজীবনের ক্ষতি, স্বাস্থ্য খরচ, এবং জীবন বীমার সুবিধা বাবদ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

মামলার বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে এতে মানসিক আঘাত, ভবিষ্যতের আয় থেকে বঞ্চিত হওয়া, এবং অন্যান্য আর্থিক ক্ষতির বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

বার্নেটের পরিবার মনে করে, বোয়িং কর্তৃপক্ষের এই ধরনের আচরণই বার্নেটকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে। তারা আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চেয়েছে।

বোয়িং কোম্পানি এখনো পর্যন্ত আদালতের এই মামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *