গাজায় ইসরায়েলের সেনারা: এবার ভূমি দখলের হুমকি!

গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান: ভূমি আগ্রাসনের পর এলাকা দখলের হুমকি। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আক্রমণ চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে।

হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করতে গাজার উত্তরাঞ্চলে ও দক্ষিণাঞ্চলে স্থল অভিযান চালাচ্ছে তারা। এরই মধ্যে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গাজার কিছু অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ শুক্রবার ঘোষণা করেন, তার দেশ হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান আরও তীব্র করবে। একইসঙ্গে গাজার জনগণের দক্ষিণ দিকে সরে যাওয়া এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘স্বেচ্ছায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের মতো বিষয়গুলোসহ সামরিক ও বেসামরিক সব ধরনের চাপ প্রয়োগ করা হবে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, ক্যাটজ সেনাবাহিনীকে গাজার অতিরিক্ত এলাকা দখলের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া, ইসরায়েলি জনপদ এবং সৈন্যদের সুরক্ষার জন্য গাজার চারপাশে নিরাপত্তা অঞ্চল সম্প্রসারণ করতে বলেছেন তিনি।

ক্যাটজ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল গাজার ভূমি দখল করতে থাকবে। জেরুজালেম পোস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, তিনি বলেন, ‘হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি না হলে, ইসরায়েল ততটা ভূখণ্ড দখল করবে, যা ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত হবে।’

খবরে আরও বলা হয়, ‘যদি জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া হয়, তাহলে ইসরায়েল গাজায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে আরও বেশি এলাকা দখল করতে থাকবে।’

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ইসরায়েলি সেনারা গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহর শাবুরা এলাকা এবং উত্তরাঞ্চলের বেইত লাহিয়াতে প্রবেশ করে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েল গাজার প্রধান উত্তর-দক্ষিণ সড়ক বন্ধ করে দেয়, যা তাদের স্থল অভিযানের অংশ ছিল।

গাজার মধ্যাঞ্চল থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খৌদারি জানিয়েছেন, বেইত লাহিয়া এবং রাফাহ এলাকার বাসিন্দাদের মতে, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের অভিযানের আগে কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি। তিনি বলেন, ‘তাদের পক্ষ থেকে বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়ার জন্য কোনো লিফলেট বা হুঁশিয়ারি বার্তা দেওয়া হয়নি।

হঠাৎ করেই ফিলিস্তিনিরা আকাশ থেকে অবিরাম বোমা হামলা ও আর্টিলারি শেলিংয়ের শিকার হয়।’ গত মঙ্গলবার ইসরায়েল গাজায় প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেয়।

এরপর থেকে এ পর্যন্ত ৫৯০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় ২০০ জন শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে, আল জাজিরার অন্য একদল প্রতিবেদক জানিয়েছেন, শুক্রবার গাজা শহরের জাইতুন এলাকায় ইসরায়েলি বিমান থেকে ‘ব্যাপক’ হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া, খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত খুজা এবং আবাসানেও বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরওয়া জানিয়েছে, গাজায় ত্রাণ সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। সংস্থাটির মুখপাত্র স্যাম রোজ বলেন, ‘২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে সংঘাত শুরুর পর এই প্রথম এত দীর্ঘ সময় ধরে গাজায় কোনো ত্রাণ সরবরাহ প্রবেশ করতে পারেনি।

যুদ্ধবিরতির সময় গত ছয় সপ্তাহে আমরা ত্রাণ বিতরণে যে অগ্রগতি অর্জন করেছিলাম, তা এখন ভেস্তে যাচ্ছে।’ অন্যদিকে, আল জাজিরার প্রতিবেদক খৌদারি জানিয়েছেন, ইসরায়েলের নতুন করে আক্রমণের কারণে গাজার স্বাস্থ্যকর্মী ও হাসপাতালগুলো মারাত্মক চাপে পড়েছে।

তিনি বলেন, ‘গাজায় গত ১৮ দিন ধরে একটিও ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেনি। এমনকি একটি ট্রাকও চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে প্রবেশ করতে পারেনি। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আহতদের বেশিরভাগের অবস্থা গুরুতর এবং তাদের মধ্যে শিশু, নারী ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি।’

উপত্যকায় জ্বালানির অভাব পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে। খৌদারি বলেন, ‘আসন্ন দিনগুলোতে জ্বালানি সরবরাহ করা না হলে গাজার বেশিরভাগ হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।’

২ মার্চ, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রথম দফা শেষ হওয়ার পর গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়। এর ফলে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়।

এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে এবং ইউরোপীয় দেশগুলো হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, এই অবরোধ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন। তথ্যসূত্র: নিজস্ব প্রতিবেদক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *