অস্ট্রেলিয়ার একটি স্কুলে গত দুই দশক ধরে থাকা একটি পাথরের স্তরে পাওয়া গেল ৬০টির বেশি আদিম জুরাসিক যুগের ডাইনোসরের পায়ের ছাপ। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নতুন গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
অস্ট্রেলিয়ার বিলোয়েলার একটি হাই স্কুলে রাখা প্রায় ১.৫ মিটার লম্বা (প্রায় ৫ ফুট) একটি পাথরের স্তরে প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছর আগের ডাইনোসরের পায়ের ছাপ দেখতে পান বিজ্ঞানীরা। এতদিন এর গুরুত্ব সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না তাদের।
সম্প্রতি জীবাশ্মবিদদের একটি দল পাথরটির উপরিভাগ পরীক্ষা করে ৪৭টি ভিন্ন ডাইনোসরের পায়ের ছাপ খুঁজে পেয়েছেন। এগুলো ‘অ্যানোমোয়েপাস স্ক্যাম্বুস’ (Anomoepus scambu) প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত ছিল। পায়ের ছাপের মতো ট্রেস জীবাশ্মের মাধ্যমে চিহ্নিত করা যায় এই প্রজাতিগুলোকে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি বর্গমিটারে এত বেশি ডাইনোসরের পায়ের ছাপ এর আগে পাওয়া যায়নি। যা আদিম জুরাসিক যুগে ডাইনোসরদের প্রাচুর্যের একটি “অভূতপূর্ব চিত্র” তুলে ধরে। উল্লেখ্য, এই সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় কোনো ডাইনোসরের কঙ্কাল পাওয়া যায়নি।
ঐতিহাসিক জীববিজ্ঞান বিষয়ক একটি জার্নালে গত ১০ই মার্চ এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণার প্রধান লেখক, কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনোসর ল্যাবের জীবাশ্মবিদ ড. অ্যান্থনি রোমিলিয়ো বলেন, “অনেক সময় জীবাশ্মবিদদের কাছেও ডাইনোসরের পায়ের ছাপ তেমন গুরুত্ব পায় না”।
তিনি আরও জানান, “অস্ট্রেলিয়ায় মধ্য জুরাসিক যুগের (প্রায় ১৬০ মিলিয়ন বছর আগে) সবচেয়ে পুরনো ডাইনোসরের কঙ্কাল পাওয়া গেলেও, পায়ের ছাপগুলোই হলো সেই সময়ের ডাইনোসরদের প্রত্যক্ষ প্রমাণ।” বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পাথরের স্তরটি ডাইনোসরের আচরণ এবং কার্যকলাপ সম্পর্কেও ধারণা দেয়।
কারণ এই প্রজাতির ডাইনোসরের পায়ের ছাপ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে।
ড. রোমিলিয়ো উন্নত থ্রিডি ইমেজিং এবং আলোর ফিল্টার ব্যবহার করে পাথরের গভীরে থাকা পায়ের ছাপগুলো খুঁজে বের করেন। সেই সাথে, প্রাণীগুলো কোন দিকে হেঁটে যাচ্ছিল, সেটিও চিহ্নিত করতে সক্ষম হন।
পায়ের ছাপগুলো ৫ সেন্টিমিটার থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা। গবেষকদের ধারণা, ডাইনোসরগুলো সম্ভবত একটি নদী পার হচ্ছিল অথবা নদীর আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিল। পাথরের উপরিভাগে ঢেউয়ের কোনো চিহ্ন না থাকায় নদীর স্রোতের দিক বোঝা কঠিন।
তবে পায়ের ছাপগুলো থেকে বোঝা যায়, ডাইনোসরগুলো দু’দিকেই হেঁটেছিল।
গবেষণায় রোমিলিয়ো ১৩টি পায়ের ছাপের ধারা খুঁজে পান, যা ১৩টি ভিন্ন ডাইনোসরের ছিল। বাকি ৩৪টি পায়ের ছাপ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে, যা মোট ৪৭টি ডাইনোসরের প্রমাণ দেয়। এই ডাইনোসরগুলোর পায়ের দৈর্ঘ্য ছিল ১৫ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত।
তাদের শরীর ছিল ভারী এবং হাতগুলো ছোট ছিল।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. পল ওলসেনের মতে, “কঙ্কালের চেয়ে পায়ের ছাপ অনেক বেশি পাওয়া গেলেও, যথাযথ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এগুলো থেকে প্রচুর তথ্য পাওয়া যেতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, আফ্রিকা এবং চীনের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া পায়ের ছাপ থেকে জানা যায়, ‘এ. স্ক্যাম্বুস’ ছিল তিন পায়ের, দুই পায়ে হাঁটা, এবং অর্নিথিশিয়ান গোত্রের একটি ডাইনোসর প্রজাতি। এই গোত্রের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে হাঁসমুখো এবং ট্রাইসেরাটপস-এর মতো তৃণভোজী ডাইনোসরও ছিল।
তাদের মুখের সামনে দাঁত ছিল এবং তারা ঘাস খেত।
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, বিলোয়েলার কাছে ক্যাল্লাইড খনিতে পার্কিং এলাকার প্রবেশদ্বারে ব্যবহৃত ২০০০ কিলোগ্রামের (প্রায় ৪৪০০ পাউন্ড) একটি পাথরের চাইতেও দুটি পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। এছাড়া, ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা একটি বই রাখার পাথরের মধ্যেও একটি পায়ের ছাপ খুঁজে পাওয়া গেছে।
হাই স্কুলে থাকা পাথরের স্তরটিও ক্যাল্লাইড খনি থেকে আনা হয়েছিল। খনন করার সময় এমন অনেক জীবাশ্ম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ড. রোমিলিয়ো বলেন, “সেখানে আরও অনেক জীবাশ্ম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে সেগুলো সময় মতো চিহ্নিত করা এবং সংগ্রহ করা কতটা নিরাপদ, সেটি একটি বড় বিষয়। আমরা ভাগ্যবান যে কিছু পায়ের ছাপ চিহ্নিত করা গেছে এবং সেগুলো নিয়ে গবেষণা করা সম্ভব হয়েছে।”
তথ্যসূত্র: সিএনএন