সোশ্যাল মিডিয়ায় নয়া কৌশল, হাসি-ঠাট্টার শিকার ডেমোক্র্যাটরা!

যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটদের ডিজিটাল কৌশল: নতুন পথে হাঁটা, সাফল্য ও বিতর্ক।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে ডেমোক্রেট দল এখন তাদের অনলাইন উপস্থিতিকে শক্তিশালী করতে চাইছে। সম্প্রতি বিভিন্ন নির্বাচনে পরাজয়ের পর তারা ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর নতুন পথ খুঁজছে।

এর অংশ হিসেবে, তারা অনলাইন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং কনটেন্ট নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে। তাদের লক্ষ্য হলো, ডিজিটাল মাধ্যমে ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করা।

এই পরিবর্তনের মূল কারিগর হিসেবে সিনেটর কোরি বুকারের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি বলছেন, “আমরা দেখছি ডেমোক্রেট সিনেটরদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। তারা নতুন এবং পরিবর্তনশীল মিডিয়া বাজারে নিজেদের কণ্ঠস্বরকে আরও জোরালো করতে প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণ করছেন।”

বুকারের মতে, এর ফলস্বরূপ, তাদের তৈরি করা কনটেন্টের সঙ্গে মানুষের সংযোগ বাড়ছে।

ডেমোক্রেটরা মনে করছেন, আগামী এক বছরে তাদের ডিজিটাল কনটেন্টের দর্শক সংখ্যা দ্বিগুণ করা সম্ভব। তবে, এই নতুন কৌশল নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হয়েছে।

অনেকে একে স্বাগত জানালেও, কেউ কেউ একে দুর্বল এবং অতিরঞ্জিত বলে মনে করছেন। বিশেষ করে, যখন একাধিক ডেমোক্রেট সিনেটর একই রকম ভিডিও তৈরি করে ট্রাম্পের সমালোচনা করেন, তখন রিপাবলিকানরা এর সমালোচনা করেন।

অন্যদিকে, ডেমোক্রেটদের এই ডিজিটাল প্রচেষ্টা রিপাবলিকানদের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের কারণ হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার দল ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে, যা তারা হোয়াইট হাউসেও বজায় রেখেছে।

তারা প্রায়ই রাজনৈতিক আলোচনা এবং প্রচারণার জন্য মজাদার ভিডিও এবং শক্তিশালী বক্তব্য ব্যবহার করে থাকে।

ডেমোক্রেটদের ডিজিটাল জগতে প্রবেশের এই প্রক্রিয়া এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। টেক্সাসের কংগ্রেসম্যান জ্যাসমিন ক্রকেট বলেছেন, তারা চান ভোটারদের কাছে তাদের “বাস্তব মানুষ” হিসেবে তুলে ধরতে।

তিনি আরও যোগ করেন, “আমি মনে করি, দল হিসেবে আমরা কিভাবে মানুষকে দেখাতে পারি যে আমরাও তাদের মতোই, সেই চেষ্টা করছি।”

ডেমোক্রেটদের এই নতুন ডিজিটাল কৌশলের পেছনে অন্যতম কারণ হলো ট্রাম্পের উত্থান। ট্রাম্পের সমালোচনামূলক মন্তব্য এবং বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে ডেমোক্রেটরা অনলাইন জগতে আরও আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিতে শুরু করেছে।

তারা মনে করছে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে জনগণের কাছে তাদের বার্তা আরও ভালোভাবে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এবং প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফ্রিসসহ দলের প্রভাবশালী নেতারাও ডিজিটাল মাধ্যমে তাদের উপস্থিতি বাড়িয়েছেন। তারা পডকাস্ট এবং অন্যান্য মাধ্যমে তাদের দলের বার্তা প্রচার করছেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেট প্রতিনিধি ডেরেক ট্রান মনে করেন, ডানপন্থী বা স্বতন্ত্র ধারার শ্রোতাদের কাছে পৌঁছানো জরুরি।

তবে, দলের মধ্যে এই কৌশল নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কিভাবে বার্তা দিতে হবে, সে বিষয়ে নেতাদের দিকনির্দেশনা স্পষ্ট নয়।

আবার কেউ কেউ মনে করেন, নেতারা তাদের পছন্দসই প্ল্যাটফর্মগুলোতে কিভাবে কাজ করতে হবে, সে সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখেন না। ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান সারা জ্যাকবস বলেছেন, “আমার মনে হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমরা যেন যতটা সম্ভব স্বাভাবিক এবং আন্তরিক থাকতে পারি।”

আরেকজন সিনেটর, রুবেন গ্যালেগো মনে করেন, মানুষের সঙ্গে কথা বলার কৌশল জানা থাকলে, মাধ্যম কোনো বিষয় নয়।

মোটকথা, ডেমোক্রেটরা ডিজিটাল দুনিয়ায় তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। সাফল্য এবং সমালোচনার মধ্যে দিয়ে তারা নতুন পথে হাঁটছে, যা ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *