মাছের জগৎ বৈচিত্র্যে ভরপুর, আর এদের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাণী হল বাঁকানো শরীর ও পিচ্ছিল চামড়ার জন্য পরিচিত, “ইেল” বা “আঁশহীন মাছ”। এদের সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য আছে যা শুনলে হয়তো আপনি অবাক হবেন।
চলুন, আজ আমরা এমনই কিছু অজানা, কৌতূহলোদ্দীপক তথ্যের সন্ধান করি।
বৈদ্যুতিক ইলের (Electric Eel) কথা শুনলে অনেকেরই হয়তো গা শিউরে ওঠে। এদের শরীরে এমন বিশেষ অঙ্গ আছে যা ৮৬০ ভোল্ট পর্যন্ত বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে।
শিকারকে কাবু করতে এই বিদ্যুতের ব্যবহার তারা করে থাকে। ভাবছেন তো, এরা বুঝি আসল “ইল”? আসলে, বৈদ্যুতিক ইল দেখতে ইলের মতো হলেও, এরা “ক্যাটফিশ”-এর জ্ঞাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
এরা দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে বেশি দেখা যায়।
এবার আসা যাক অন্য এক ইলের কথায়, যার জীবনকাল শুনলে বিস্মিত হতে হয়।
ব্রান্টেভিক (Brantevik), সুইডেনের এক লোকালয়ে ১৮৫৯ সালে আট বছর বয়সী এক বালকের জালে ধরা পরেছিল একটি ইউরোপীয় ইল। বালকটি এটিকে তার পরিবারের কুয়োতে রেখেছিল এবং সেটি ২০১৪ সাল পর্যন্ত, প্রায় ১৫৫ বছর বেঁচে ছিল!
ইল মাছেরা শুধু যে জলের স্রোতে সাঁতরায়, তা কিন্তু নয়। এরা প্রয়োজনে পেছনের দিকেও সাঁতরা তে পারে।
শরীরের পুরোটা ব্যবহার করে এরা ঢেউ তৈরি করে এবং এইভাবেই সামনের দিকে ও পেছনের দিকে চলতে পারে। রাতের বেলায় এদের তৎপরতা বাড়ে, কারণ দিনের আলোতে এরা লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে।
রাতে এরা ঘ্রাণশক্তির মাধ্যমে শিকার খুঁজে নেয়।
ইল মাছের বাসস্থানও বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ।
আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাংশে অবস্থিত সারগাসো সাগর (Sargasso Sea), যা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কাছাকাছি, সেখানে এদের জন্ম। এরপর তারা ইউরোপ ও আমেরিকার নদীতে পরিভ্রমণ করে এবং পূর্ণতা লাভের পর ডিম পাড়ার জন্য আবার ফিরে আসে সেই সারগাসো সাগরে।
আশ্চর্য হলেও সত্যি, কিছু ইল জল থেকে বেশ কিছুক্ষণ বাইরেও বাঁচতে পারে। এদের শরীর নিঃসৃত পিচ্ছিল শ্লেষ্মা তাদের এই ক্ষমতা দেয়।
এই শ্লেষ্মা তাদের শিকারী ও পরজীবীর আক্রমণ থেকে বাঁচায় এবং জলের মধ্যে সহজে চলাচল করতে সহায়তা করে।
তবে সব ইলের জীবন এত সহজ নয়।
একবার এক ডুবুরিকে বিশাল আকৃতির একটি “কংগার ইল” (Conger Eel) আক্রমণ করেছিল, যা ছিল প্রায় ৬ ফুট লম্বা। এছাড়াও, জাপানে “ইয়েলোফিশ” বা “আনাগি” নামে পরিচিত স্বাদু পানির ইল খুব জনপ্রিয় খাদ্য।
অতিরিক্ত শিকারের কারণে বর্তমানে এটি বিলুপ্তির পথে।
ছোট্ট “গ্লাস ইল” (Glass Eel)-এর কথা ভাবুন তো! এরা জন্মের সময় স্বচ্ছ কাঁচের মতো থাকে।
এই স্বচ্ছতার কারণে এরা সমুদ্রের বিশাল পথ পাড়ি দিতে পারে, যা তাদের শিকারীদের চোখে ধুলো দেয়।
প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপ, ফরাসি পলিনেশিয়ার হুয়াহিন (Huahine) -এ, ইল মাছকে পবিত্র জ্ঞান করা হয়। লোককথায় আছে, সেখানকার demi-god মাউই ইলদের উপহার দিয়েছিলেন।
এখানকার “মুরাই ব্রিজ”-এর কাছে পাহাড়ের ঝর্ণায় অনেক পবিত্র ইল দেখা যায়।
ইলদের জগতে আরও এক বিস্ময়কর ঘটনা হল, এদের মধ্যে কিছু প্রজাতি নিজেদের প্রজাতিকেই ভক্ষণ করে।
এছাড়াও, “মোর ইল” (Moray Eel) -এর দুটি চোয়াল থাকে, যা শিকারকে দ্রুত ধরতে ও গিলে ফেলতে সাহায্য করে।
হাওয়াই গার্ডেন ইলেরা (Hawaiian garden eels) বালুকাময় সমুদ্রের তলদেশে ঘাস বা শৈবালের মতো লুকিয়ে থাকে, যা তাদের শিকার ধরার কৌশল।
সবচেয়ে বড় “স্লেন্ডার জায়ান্ট মোর ইল” (Slender giant moray eel) -এর দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১২.৯ ফুট! এদেরকে সাধারণত ইন্দো-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে দেখা যায়।
এমনকি, নিউজিল্যান্ডের কিছু “ইয়ং লংফিন ইল” (Young longfin eels) প্রায় ৬৫.৬ ফুট উঁচু জলপ্রপাতও বেয়ে উঠতে পারে।
এভাবে, ইলেরা তাদের বিচিত্র জীবনযাত্রা ও বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে আমাদের বিস্মিত করে। এদের শ্লেষ্মার উপকারিতা থেকে শুরু করে বার্ষিক প্রজনন প্রক্রিয়া পর্যন্ত, এই মাছগুলি প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল এন্ড লেজার