লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের কারণে ব্যাপক বিমান চলাচল ব্যাহত হয়েছে, যার ফলে বিশ্বজুড়ে কয়েক লক্ষ যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিমানবন্দরের কাছে একটি বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে আগুন লাগার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এর ফলে বিমানবন্দরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং শুক্রবার পর্যন্ত বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে, বিমানবন্দরের প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন লাগে। এর ফলে বিমানবন্দরের জরুরি পরিষেবা ব্যাহত হয় এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুক্রবার রাত ১১:৫৯ পর্যন্ত বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড জানিয়েছে, ১০টি ইঞ্জিন ও ৭০ জন দমকলকর্মী আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও, শুক্রবার সারাদিন দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিটিশ জ্বালানি সচিব এড মিলিব্যান্ড এই ঘটনাকে ‘বিপর্যয়কর’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, বিদ্যুতের ব্যাকআপ জেনারেটর এবং বিমানবন্দরের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কেন্দ্রটিতে আগুন লাগার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ন্যাশনাল গ্রিড নামের একটি সংস্থা, যারা ব্রিটেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামো দেখাশোনা করে, জানিয়েছে যে আগুনে সাবস্টেশনের সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।
যদিও শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত প্রায় ৬২,০০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা গেছে, এখনও প্রায় ৪,৯০০ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছেন।
এই অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো পর্যন্ত অজানা। তবে, মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ওপর এর প্রভাবের কারণে সন্ত্রাস দমন বিভাগের গোয়েন্দারা এই ঘটনার তদন্ত করছে।
এড মিলিব্যান্ড বলেছেন, “আমরা এই আগুনের কারণ জানি না। এটা স্পষ্টতই একটি নজিরবিহীন ঘটনা।” তিনি আরও যোগ করেন, এই অগ্নিকাণ্ড এবং হিথরোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এই ঘটনার জেরে প্রায় দুই লক্ষ মানুষের বিমান ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল বা পরিবর্তন করতে হয়েছে। হিথরো কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের বিমানবন্দরে যেতে নিষেধ করেছে এবং টিকিটের রি-বুকিংয়ের জন্য এয়ারলাইন্সের সাথে যোগাযোগ করতে বলেছে।
বিমানবন্দরের সকল ফ্লাইট বাতিল হওয়ায়, উত্তর আমেরিকা ও এশিয়া থেকে আসা অনেক দীর্ঘ-পাল্লার বিমানকে হয় অন্য বিমানবন্দরে অবতরণ করতে হয়েছে, অথবা মাঝপথ থেকে ফিরে যেতে হয়েছে।
হিথরোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করা বিমানগুলোকে আমস্টারডামের শিপোল বিমানবন্দর, আয়ারল্যান্ডের শ্যানন বিমানবন্দর, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো, ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার, ফ্রান্সের প্যারিসের চার্লস ডি গল বিমানবন্দর, ফ্রান্সের লিওন এবং জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট সহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে অবতরণ করতে হয়েছে।
বিমানবন্দরের রাতের ফ্লাইটের সময়সীমা সীমিত থাকার কারণে স্বল্প দূরত্বের ফ্লাইটগুলোতে এর প্রভাব শুক্রবার সকাল পর্যন্ত দেখা যায়নি। তবে, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষের ভ্রমণ বাতিল হয়েছে।
বিমান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে প্রায় ৪,০০০ টন পণ্যও আটকা পড়েছে বলে জানা গেছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার বিমানবন্দর চালু হলেও, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কয়েক দিন সময় লাগবে। কারণ, এয়ারলাইন্সগুলোকে তাদের ফ্লাইট ও ক্রু’দের পুনরায় সাজাতে হবে এবং বাতিল হওয়া ফ্লাইটগুলোর যাত্রীদের জন্য ব্যবস্থা করতে হবে।
বিমান চলাচল স্বাভাবিক হতে ২ থেকে ৪ দিন সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হিথরোর এই ঘটনা যুক্তরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সন্ত্রাসী হামলার মতো ঘটনা ঘটলে, দেশের যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক কতটা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
হিথরো গত বছর ৮ কোটি ৩৬ লক্ষ যাত্রী পরিবহন করে ইউরোপের সবচেয়ে ব্যস্ত বিমানবন্দরে পরিণত হয়েছিল। এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।
লন্ডনে হিথরোর পাশাপাশি আরও পাঁচটি বিমানবন্দর রয়েছে, তবে যাত্রী পরিবহনের দিক থেকে এগুলো হিথরোর তুলনায় অনেক ছোট। উদাহরণস্বরূপ, লন্ডনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর গ্যাটউইক গত বছর ৪ কোটি ৩২ লক্ষ যাত্রী পরিবহন করেছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস