লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের জেরে বিশ্বজুড়ে বিমান চলাচলে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিদ্যুতের সাবস্টেশনে আগুন লাগার কারণে এক হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে, যার ফলে কয়েক লক্ষ যাত্রীর ভ্রমণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে, বিমান চলাচলে এমন বিঘ্ন ঘটার ঘটনা নতুন নয়। অতীতেও বিভিন্ন কারণে আকাশপথে যাত্রী পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাক, এই ধরনের কয়েকটি ঘটনার কথা।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে, সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা CrowdStrike-এর একটি ত্রুটিপূর্ণ সফটওয়্যার আপডেটের কারণে বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিগত বিপর্যয় দেখা দেয়। এর ফলে এয়ারলাইন্সগুলি তাদের টিকিট বুকিং সিস্টেমে প্রবেশ করতে সমস্যা অনুভব করে।
হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল হয় এবং কয়েক হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হয়, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার বিমানবন্দরগুলোতে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়।
২০২৩ সালের আগস্টে, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল এয়ার ট্রাফিক সার্ভিসের (NATS) প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ফ্লাইট পরিকল্পনা ম্যানুয়ালি পরিচালনা করতে হয়, যার ফলস্বরূপ গ্রীষ্মের ছুটির সময়ে শত শত ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত হয়।
২০২০ সালের মার্চ মাসে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বের প্রায় সব বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন দেশের সরকার সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
এপ্রিল মাস নাগাদ বিশ্বজুড়ে বিমানের ফ্লাইট চলাচল ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছিল। এরপর যখন আকাশপথে পুনরায় ভ্রমণ শুরু হয়, তখন মাস্ক পরা, করোনা টেস্ট করানোসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা ভ্রমণকে আরও কঠিন এবং ব্যয়বহুল করে তোলে।
অবশেষে, ২০২৪ সালে যাত্রী সংখ্যা ২০১৯ সালের পর্যায়ে পৌঁছায়।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে, যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর গ্যাটউইকে ড্রোন ওড়ার কারণে প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার যাত্রী আটকা পড়েন বা তাঁদের ফ্লাইট বিলম্বিত হয়। বিমানবন্দরের কার্যক্রম কয়েক দিন বন্ধ ছিল।
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে পুলিশের দীর্ঘ তদন্ত চললেও, তাঁদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
২০১৭ সালের মে মাসে, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ডেটা সেন্টারে কম্পিউটার বিভ্রাটের কারণে হিথরো এবং গ্যাটউইক থেকে সমস্ত ফ্লাইট বাতিল করতে হয়। প্রায় ৭৫ হাজার যাত্রী এই ঘটনার শিকার হন।
২০১৬ সালের আগস্টে, ডেল্টা এয়ারলাইন্সের একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণে তাদের ডেটা সেন্টারের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে বিশ্বজুড়ে ডেল্টার বিমানগুলি গ্রাউন্ডেড হয়।
ডেল্টা জানায়, এই ঘটনার কারণে তারা ২,০০০ এর বেশি ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয় এবং তাদের ১০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১,১০০ কোটি টাকা) রাজস্ব ক্ষতি হয়।
২০১০ সালের এপ্রিলে, আইসল্যান্ডের আগ্নেয়গিরি Eyjafjallajökull-এর অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বায়ুমণ্ডলে ব্যাপক পরিমাণে ছাই ও ধুলোর সৃষ্টি হয়। এর কারণে উত্তর ইউরোপের আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিমান ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার মধ্যে ফ্লাইট বাতিল করা হয়। এতে ১ লক্ষেরও বেশি ফ্লাইট বাতিল হয় এবং কয়েক মিলিয়ন যাত্রী আটকা পড়েন।
এর ফলে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩,৩০০০ কোটি টাকা) ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর, সন্ত্রাসীরা বিমানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগনে আঘাত হানে। এর ফলে সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশপথ বাণিজ্যিক ফ্লাইটের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
হাজার হাজার বিমান গ্রাউন্ডেড করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রে আসার পথে থাকা ফ্লাইটগুলোকে কানাডা ও মেক্সিকোতে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
দুই দিন পর ফ্লাইট চলাচল পুনরায় শুরু হলেও, আকাশপথে ভ্রমণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বদলে যায়।
এই ঘটনাগুলো থেকে বোঝা যায়, প্রযুক্তিগত ত্রুটি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা সন্ত্রাসী হামলার মতো বিভিন্ন কারণে আকাশপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটতে পারে। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি রাখা অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস