মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান হিসেবে মার্কো রুবিও’র ভূমিকা ক্রমশই যেনো ম্লান হয়ে আসছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী স্টিভ উইটকফ-এর উত্থান রুবিও’র জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উইটকফ পররাষ্ট্র বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যা অনেকের দৃষ্টিতে রুবিও’র ক্ষমতার ওপর ছায়া ফেলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাফল্যের পেছনে উইটকফের অবদান রয়েছে। ইসরায়েলে জিম্মিদের মুক্তি, গাজায় যুদ্ধবিরতি, এবং রাশিয়া থেকে মার্কিন নাগরিক মার্ক ফোগেলকে ফিরিয়ে আনার মতো ঘটনাগুলোতে উইটকফের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে ঘন ঘন সফর করেছেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এমনকি, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে বসার জন্য তিনি মস্কোতেও গিয়েছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যক্তি সিএনএনকে জানিয়েছেন, “উইটকফ যেন পুরো বিশ্বজুড়ে পররাষ্ট্র সচিবের মতোই কাজ করছেন। তার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, ট্রাম্পের একশো ভাগ আস্থা তার ওপর আছে।”
অন্যদিকে, রুবিওকে বিভিন্ন সময়ে মধ্য আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং কানাডায় ছুটে যেতে দেখা গেছে। অভিবাসন, গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি জি-৭ সম্মেলনেও তিনি অংশ নিয়েছেন। তবে প্রশাসনের কিছু পদক্ষেপে তার অস্বস্তিও প্রকাশ পেয়েছে। একটি সূত্রের খবর অনুযায়ী, ট্রাম্প মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি ইলন মাস্কের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। এমনকি, হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের কথোপকথনের সময় তাকে কিছুটা বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পররাষ্ট্র দপ্তরে রুবিও’র প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও রুবিও ছিলেন মন্ত্রিসভার প্রথম সদস্য, যিনি কোনো বিরোধিতা ছাড়াই সিনেটে অনুমোদন লাভ করেন, তবুও তার ভূমিকা আগের পররাষ্ট্র সচিবদের মতো প্রভাবশালী হয়ে ওঠেনি। এমনকি, ট্রাম্পের কট্টর পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাসী অনেক সমর্থকও রুবিও’র ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনেটর সিএনএনকে বলেছেন, “আমার মনে হয় রুবিও হতাশ।”
কূটনৈতিক মহলে রুবিও’র কাজের প্রশংসা শোনা গেলেও, অনেকে মনে করেন হোয়াইট হাউস তার গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছে। একজন ব্যক্তি বলেছেন, “এটা তিনি (রুবিও) আশা করেননি। উইটকফ যেন আকাশ থেকে পড়লেন। ট্রাম্প তাকে খুব পছন্দ করেন।”
অবশ্য, পররাষ্ট্র সচিবের সকল সুযোগ-সুবিধা এখনো রুবিও’র হাতেই রয়েছে। উইটকফ যেখানে ব্যক্তিগত বিমানে যাতায়াত করেন, সেখানে রুবিও সরকারি নিরাপত্তা এবং বিশেষ বিমানে বিদেশ সফরে যান।
এদিকে, রুবিও’র ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, তিনি সম্ভবত ১৮ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত এই পদে থাকতে পারেন। এর কারণ হিসেবে তারা ধারণা করছেন, ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য তিনি এই সময়টুকু কাজে লাগাতে চান।
অন্যদিকে, পররাষ্ট্র বিষয়ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখছেন রুবিও। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হয়তো তিনি এড়িয়ে চলছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক রিপাবলিকান সিনেটর সিএনএনকে বলেছেন, “আমার মনে হয়, মার্কো তার জায়গা খুঁজে নেবেন। সম্ভবত তিনি বিশ্বের উত্তপ্ত এলাকাগুলো এড়িয়ে চলবেন এবং শ্বেত ভবনকে সেই দায়িত্ব দেবেন।”
মার্কো রুবিও সিনেটে দীর্ঘদিন ধরে পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে কাজ করেছেন। সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির শীর্ষ রিপাবলিকান এবং পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য হিসেবে তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এমনকি, ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তার নামও শোনা গিয়েছিল।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই অস্থির পরিস্থিতিতে রুবিও কত দিন টিকতে পারেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা চলছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন