যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাখাতে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিমালার প্রভাব, উদ্বিগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে, বিশেষ করে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তের কারণে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একদিকে যেমন আর্থিক সংকটে পড়ছে, তেমনিভাবে শিক্ষাব্যবস্থা, বিশেষ করে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গবেষণা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে বাজেট কর্তন, ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভের সময় ইহুদি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতার অভিযোগের তদন্ত এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর কড়া নজরদারি। এর ফলস্বরূপ, হার্ভার্ড, ডিউক ও স্ট্যানফোর্ডের মতো খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কর্মী নিয়োগ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তারা প্রায় ২ হাজারের বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করতে যাচ্ছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID) থেকে পাওয়া তাদের ৮০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ এনে তাদের প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অনুদান ও চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ও বোর্ড সদস্যদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলো এখন দ্বিধায় পড়েছে – তারা সরকারের নির্দেশ মেনে চলবে, নাকি তাদের স্বকীয়তা ও নীতির প্রশ্নে আপোসহীন থাকবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই ধরনের পদক্ষেপ আমেরিকার অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পাশাপাশি দেশটির গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য এবং মুক্তচিন্তার পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট লি বোলিংগার একে শিক্ষাব্যবস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের ওপর ‘সবচেয়ে গুরুতর হস্তক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বর্তমানে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আসা কমে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৪ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।
কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, ভিসা বাতিল ও অন্যান্য কড়াকড়ির কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে আসতে ভয় পেতে পারে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক অবস্থার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
শুধু তাই নয়, গবেষণা খাতে ফেডারেল সরকারের দেওয়া অনুদান কমানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মতো জটিল রোগ নিয়ে গবেষণা এবং উন্নত চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কারণ, অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যেতে আগ্রহী।
এমন পরিস্থিতিতে ভিসা এবং আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসলে, তা তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মনে করছে, বর্তমান পরিস্থিতি অতীতের ‘ম্যাকার্থি যুগ’-এর(১৯৫০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে কমিউনিস্ট সন্দেহে বুদ্ধিজীবীদের ওপর নিপীড়ন) থেকেও ভয়াবহ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন