শরীরে ত্রিশূল বিদ্ধ করা কি নিছকই কৌতুক? ধর্ম আর বিশ্বাসের এক গভীর গল্প!

হিন্দু ধর্মানুসারে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এমন কিছু উৎসব অনুষ্ঠিত হয় যেখানে ভক্তরা নিজেদের চরম ত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এই উৎসবে শারীরিক কষ্টকে ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হয়।

কেউ কেউ শরীরে লোহার শিক ঢুকিয়ে দেন, কেউ আবার আগুনে হাঁটেন, যা দেখলে অনেক সময় গা শিউরে ওঠে। এই ধরনের ক্রিয়াগুলো শুধু ধর্মীয় রীতিনীতিই নয়, এর সঙ্গে মিশে আছে লোককথা ও প্রাচীন ঐতিহ্য।

পশ্চিমবঙ্গের গাজন উৎসবে পুরুষরা ফসলের ভালো ফলনের আশায় শরীরে লোহার শিক ও তীর বিদ্ধ করেন। তামিলনাড়ুর পাঙ্গুনি উত্তরম উৎসবে ভক্তরা দেবতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শরীরে ত্রিশূল ফোঁড়েন।

এছাড়াও, থাইপুসাম উৎসবে জিভ ও গালে বর্ষা বিদ্ধ করার মতো ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখা যায়। আবার, গरुড় থুক্কাম উৎসবে ধারালো লোহার हुক দিয়ে শরীর ঝুলিয়ে দেওয়ার রীতিও প্রচলিত আছে।

এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, এগুলো কি নিছকই ভেল্কিবাজি, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে? কেউ কেউ একে ঐশ্বরিক ক্ষমতা বা দৈবশক্তির প্রমাণ হিসেবে দেখেন।

তাদের বিশ্বাস, ঈশ্বর সবসময় তাদের রক্ষা করেন, তাই আঘাত পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আবার, কেউ কেউ এটিকে নিছক কৌশল বা পারফর্মেন্স হিসেবেও মনে করেন।

উদাহরণস্বরূপ, পল্লানিয়াম্মাল সানমুগাম নামে এক নারীর কথা বলা যায়। তিনি দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময় সিজারিয়ান সেকশন করতে রাজি ছিলেন না। তিনি প্রার্থনা করেছিলেন, স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্ম দিতে পারলে, তিনি পাঙ্গুনি উত্তরম উৎসবে শরীরে ত্রিশূল বিদ্ধ করবেন।

তার মনোবাসনা পূরণ হওয়ার পর তিনি ১৩ বার শরীরে ত্রিশূল বিদ্ধ করেছেন। তার মতে, এই কাজটি করতে কোনো কষ্ট হয় না। এমনকি, ত্রিশূল তোলার পর ক্ষতস্থানে পবিত্র ভস্ম লাগালে সঙ্গে সঙ্গেই রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায় এবং এক সপ্তাহের মধ্যে घा হয়ে যায়।

অন্যদিকে, ভারতের খ্যাতি সম্পন্ন জাদুশিল্পী ইশামুদ্দিন খান মনে করেন, এই ধরনের কার্যকলাপ নিছকই কৌশল। তিনি বলেন, “আমি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এই কৌশলগুলো শিখেছি। এর সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই।”

তিনি আরও জানান, সাধারণ মানুষ ছাড়াও অনেক শিক্ষিত ও ধনী ব্যক্তিও তার কাছে আসেন তাদের ভাগ্য গণনা করার জন্য। প্রাচীনকালে, এই ধরনের কার্যকলাপ ছিল শাসকদের মনোরঞ্জনের একটি অংশ।

বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে, রাজাদের দরবারে পেশাদার জাদুকর ও ভেল্কিবাজদের আনাগোনা ছিল। তারা নানা ধরনের খেলা দেখিয়ে মানুষকে আনন্দ দিতেন। সেই সময়ে ধর্ম ও জাদু একে অপরের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল।

তবে, বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে অনেকেই এই ধরনের ক্রিয়াগুলোকে নিছক বিশ্বাস ও ভক্তির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখেন। তাদের মতে, এটি কোনো জাদু নয়, বরং গভীর আত্মত্যাগের এক রূপ।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *