বৃষ্টির দিনে কিংবা বন্ধুদের সাথে খোলামেলা আড্ডায় গান শোনার মজাই আলাদা। আর আজকাল বাজারে এসেছে এমন সব পোর্টেবল ব্লুটুথ স্পিকার যা সহজে বহনযোগ্য এবং জলরোধীও।
ফলে বৃষ্টির মধ্যে অথবা সমুদ্রের ধারেও নিশ্চিন্তে গান শোনা যায়। চলুন, জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু স্পিকারের কথা যা আপনার জন্য সেরা হতে পারে।
বর্ষাকালে বা দেশের আর্দ্র আবহাওয়ায় ইলেকট্রনিক গ্যাজেট-এর সুরক্ষার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ব্লুটুথ স্পিকার কেনার সময় তাই জলরোধী (waterproof) বৈশিষ্ট্যটি দেখা দরকার।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের স্পিকার পাওয়া যায়, তবে সবগুলি জলরোধী নয়। জল ও ধুলো থেকে সুরক্ষার জন্য স্পিকারের ‘আইপি’ (IP) রেটিং দেখা জরুরি।
এই রেটিং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং এটি স্পিকারের জল ও ধুলো প্রতিরোধের ক্ষমতা নির্দেশ করে।
আইপি রেটিং কিভাবে বুঝবেন? স্পিকারের জলরোধী ক্ষমতা বোঝার জন্য আইপি রেটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এই রেটিং দুটি অংশে বিভক্ত থাকে – প্রথম সংখ্যাটি কঠিন বস্তু (যেমন ধুলো) থেকে সুরক্ষার মাত্রা নির্দেশ করে, এবং দ্বিতীয় সংখ্যাটি তরল (যেমন জল) থেকে সুরক্ষার মাত্রা নির্দেশ করে।
উদাহরণস্বরূপ, IP67 রেটিং-এর ক্ষেত্রে ‘৬’ নির্দেশ করে স্পিকারটি ধুলো থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত এবং ‘৭’ নির্দেশ করে এটি স্বল্প সময়ের জন্য ১ মিটার গভীরতা পর্যন্ত জলে থাকতে পারবে।
সেরা কয়েকটি জলরোধী স্পিকার:
১. জেবিএল ফ্লিপ ৬ (JBL Flip 6): এই স্পিকারটি অত্যন্ত বহনযোগ্য এবং এর IP67 রেটিং রয়েছে।
অর্থাৎ, এটি জল ও ধুলো থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। এটির শব্দ খুবই উন্নত মানের এবং দামও তুলনামূলকভাবে কম।
যারা প্রায়ই ভ্রমণ করেন, তাদের জন্য এই স্পিকারটি দারুণ। একবার চার্জ দিলে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত গান শোনা যায়।
২. জেবিএল এক্সট্রিম ৩ (JBL Xtreme 3): জেবিএল এক্সট্রিম ৩ অপেক্ষাকৃত বড় আকারের একটি স্পিকার, তবে এর শব্দ অনেক শক্তিশালী।
এটির দুটি ২৫ ওয়াটের উফার এবং দুটি ১৫ ওয়াটের টুইটার রয়েছে, যা উচ্চ এবং নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ ভালোভাবে সরবরাহ করতে পারে।
একবার চার্জ দিলে ১৫ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এটি ব্যবহার করা যায়। এই স্পিকার ফোন চার্জ করারও সুবিধা রয়েছে।
৩. আলটিমেট ইয়ার্স ওয়ান্ডারবুম ৪ (Ultimate Ears Wonderboom 4): ছোট্ট আকারের কারণে এই স্পিকারটি ভ্রমণের জন্য খুবই উপযোগী।
এর শব্দ গুণমানও বেশ ভালো। এটি পানিতে ভাসতেও পারে, যা এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
এই স্পিকারটিতে পডকাস্ট এবং মিউজিক মোড রয়েছে, যা প্লেব্যাকের ধরন অনুযায়ী শব্দের গুণমানকে সমন্বয় করে।
৪. বিএন্ডও বিওসাউন্ড এ১ (B&O Beosound A1): এই স্পিকারটি আকারে ছোট হলেও এর শব্দ বেশ শক্তিশালী।
এটি omnidirectional আউটপুট এবং অ্যাপের মাধ্যমে কাস্টমাইজযোগ্য ইকুয়ালাইজার সেটিংস সহ আসে, যা উন্নত শব্দ সরবরাহ করে।
৫. অ্যাংকর সাউন্ডকোর সিলেক্ট ২এস (Anker Soundcore Select 2S): এই স্পিকারটি বাজেট-বান্ধব এবং ছোট আকারের।
এটির মাধ্যমে স্টেরিও অডিও শোনা যায় এবং অ্যাপের মাধ্যমে ইকুয়ালাইজার কাস্টমাইজ করা যায়।
স্পিকার কেনার সময় কি কি বিষয় মনে রাখবেন:
- আইপি রেটিং: স্পিকারের জলরোধী ক্ষমতা যাচাই করতে আইপি রেটিং দেখুন।
- ব্যবহারের স্থান: স্পিকারটি কোথায় ব্যবহার করবেন, সেই অনুযায়ী ব্যাটারি লাইফ ও আকারের দিকে খেয়াল রাখুন।
- গুণমান: ভালো ব্র্যান্ডের স্পিকার কিনুন এবং নিশ্চিত করুন যে সেটি জলরোধী পরীক্ষার মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে।
- আকার ও বহনযোগ্যতা: ভ্রমণের জন্য ছোট ও হালকা স্পিকার বেছে নিন।
- অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য: স্পিকারফোনের সুবিধা অথবা ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো অতিরিক্ত ফিচারগুলি আপনার প্রয়োজন কিনা, তা বিবেচনা করুন।
কোথায় পাওয়া যাবে? বাংলাদেশে এই স্পিকারগুলো বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স শোরুমে পাওয়া যেতে পারে, যেমন – ট্রান্সকম ডিজিটাল, ইলেক্ট্রো মার্ট, অথবা গ্যাজেট ও ইলেক্ট্রনিক্সের অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও (যেমন Daraz)।
কেনার আগে দাম যাচাই করে নিন এবং নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনি আসল পণ্যটি কিনছেন।
উপসংহার পোর্টেবল ব্লুটুথ স্পিকার এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
জলরোধী স্পিকারগুলি নিশ্চিত করে যে আপনি যেকোনো পরিস্থিতিতে, এমনকি বৃষ্টিতে ভিজেও আপনার পছন্দের গান উপভোগ করতে পারবেন।
তাই, আপনার প্রয়োজন ও বাজেট অনুযায়ী একটি জলরোধী স্পিকার বেছে নিন এবং সঙ্গ উপভোগ করুন।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক