ফর্মুলা ওয়ানে (Formula One) নতুন মৌসুমে ম্যাকলারেনের (McLaren) চমক জাগানো পারফরম্যান্স এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। দলটির চালকদের গাড়ির গতি যেমন ঈর্ষণীয়, তেমনি তাদের কৌশলও মুগ্ধ করার মতো।
বিশেষ করে, টায়ারের ব্যবহার এবং গাড়ির ‘মেকানিক্যাল গ্রিপ’ এর ওপর তাদের দক্ষতা অন্য দলগুলোর কাছে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ম্যাকলারেনের চালক ল্যান্ডো নরিসের (Lando Norris) অস্ট্রেলিয়ার গ্র্যান্ড প্রিক্সের (Grand Prix) জয় শুধু গতির কারণে নয়, বরং কৌশলগত সাফল্যের কারণেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
কোয়ালিফাইং রাউন্ডে (Qualifying Round) তারা নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যাক্স ভেরস্টাপেনের (Max Verstappen) চেয়ে প্রায় চার দশমাংশ এগিয়ে ছিল। নরম টায়ারের (Soft Tyre) ওপর নির্ভর করে ল্যাপের (Lap) শেষ দিকেও তারা তাদের গাড়ির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সক্ষম হয়, যেখানে অন্য দলগুলোর টায়ারের ঘর্ষণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছিল।
বৃষ্টির কারণে রেসে (Race) কিছুটা পরিবর্তন এলেও, ম্যাকলারেন বৃষ্টির মধ্যে ভালো পারফর্ম করে।
যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল, তখন ভেরস্টাপেন ১৬ ল্যাপ পর্যন্ত ম্যাকলারেনের কাছাকাছি ছিলেন। কিন্তু তার মাঝারি ধরনের টায়ার (Intermediate Tyre) দ্রুত ক্ষয় হতে শুরু করলে তিনি পিছিয়ে পড়েন। আট ল্যাপের মধ্যে তিনি ৫ সেকেন্ড থেকে ১৫ সেকেন্ডে পিছিয়ে যান।
বৃষ্টির কারণে নিরাপত্তা গাড়ি (Safety Car) নামানো না হলে, ম্যাকলারেন সম্ভবত প্রতিপক্ষের চেয়ে ৩০ সেকেন্ডেরও বেশি এগিয়ে থাকত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ম্যাকলারেনের গাড়ির অ্যারোডাইনামিক (Aerodynamic) ক্ষমতা ভালো, তবে তাদের আসল কৌশল হলো টায়ারের সঠিক ব্যবহার।
দলের প্রধান আন্দ্রেয়া স্টেলা (Andrea Stella) বলেন, “আমরা দেখেছি, গাড়িটি টায়ারের সঙ্গে খুব ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে। আমরা যে ব্যবধান তৈরি করতে পেরেছি, তার পেছনে শুধু গাড়ির গতি নয়, টায়ারের প্রতি গাড়ির ‘কোমল আচরণও’ কাজ করেছে।”
ফর্মুলা ওয়ানে টায়ারের গুরুত্ব নতুন নয়।
গত দুই দশকে, টায়ার প্রস্তুতকারক কোম্পানি পিরেলি (Pirelli) এমন টায়ার তৈরি করেছে যা ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয় হবে, ফলে কৌশলগত পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি হয়।
টায়ারের এই ক্ষয়, গাড়ির ধরন এবং চালনার ওপর নির্ভর করে। দ্রুত টায়ারের তাপমাত্রা বাড়ানো, কত দ্রুত সেই তাপমাত্রা ধরে রাখা যায়, এই বিষয়গুলো গাড়ির ‘মেকানিক্যাল গ্রিপ’-এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সহজ কথায়, যে গাড়ি টায়ারের ওপর কম চাপ সৃষ্টি করতে পারে, সেটি বেশি সময় ধরে ভালো গতিতে চলতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার রেসে ম্যাকলারেন এই দিকটিতে অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল।
সাধারণত, যে গাড়ি টায়ারের ক্ষয় রোধ করতে পারে, তাদের টায়ারের তাপমাত্রা বাড়াতে সমস্যা হয়, যা কোয়ালিফাইং রাউন্ডে তাদের দুর্বল করে দেয়।
কিন্তু ম্যাকলারেনের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়নি। রেডবুলের (Red Bull) প্রধান ক্রিশ্চিয়ান হর্নার (Christian Horner) বলেন, “তাদের টায়ার দ্রুত গরম হয় এবং ক্ষয়ও কম হয়, যা বেশ অস্বাভাবিক।”
ম্যাকলারেনের গাড়ির সামনের ব্রেক ডাক্টের (Brake Duct) বিশেষ নকশা তাদের এই সুবিধা এনে দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ব্রেক ডাক্ট সম্ভবত সামনের টায়ারের তাপমাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, যা তাদের চালকদের জন্য কৌশলগত সুবিধা তৈরি করে।
যদিও চীনের স্প্রিন্ট কোয়ালিফাইংয়ে (Sprint Qualifying) নরিস ভুল করেছিলেন, তবে ফেরারি (Ferrari)-র লুইস হ্যামিল্টন (Lewis Hamilton) ভালো গতি দেখিয়েছেন।
এর থেকে বোঝা যায়, ম্যাকলারেনের এই সুবিধা এখনো পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
পিরেলি জানিয়েছে, দলগুলো নতুন টায়ারের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
শিংহাইয়ে (Shanghai) রবিবার অনুষ্ঠিতব্য ড্রাই রেস (Dry Race) পরিস্থিতি আরও পরিষ্কার করবে।
যদি নরিস এবং পিয়াস্ত্রি (Piastri) আবারও ভালো করেন, তবে অন্য দলগুলো তাদের ‘জুতা’ (টায়ার)-র কৌশল পরিবর্তনে মনোযোগ দেবে।
তথ্য সূত্র: