মাছ শিকারীর পিঠে চড়ে হাঙরের সমুদ্র ভ্রমণ, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা।
সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে থাকা অনেক রহস্যের একটি নতুন উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে নিউজিল্যান্ডের উপকূলে। সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা একটি বিরল দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছেন যেখানে একটি অক্টোপাসকে একটি হাঙরের পিঠে চড়ে সমুদ্র ভ্রমণ করতে দেখা গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে নিউজিল্যান্ডের উত্তর উপকূলের হাউরাকি উপসাগরে, যেখানে গবেষকরা ডিসেম্বর ২০২৩ এ একটি বৃহৎ শর্টফিন মাকো হাঙরের পিঠে কমলা রঙের একটি মায়োরি অক্টোপাসকে দেখতে পান।
অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দী করেন। মূলত তারা ঐ অঞ্চলে খাদ্য সংগ্রহের দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করছিলেন। প্রথমে, বিজ্ঞানীরা দৃশ্যটি দেখে কিছুটা বিভ্রান্ত হয়েছিলেন।
গবেষক দলের সদস্য রশেল কনস্টানটাইন জানান, হাঙরের মাথার উপর কমলা রঙের একটি বস্তু দেখে তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন হয়তো এটি কোনো আঘাত অথবা মাছ ধরার জালের সাথে আটকা পড়েছে। পরবর্তীতে ড্রোন ব্যবহার করে কাছ থেকে দেখার পর তারা বুঝতে পারেন যে এটি একটি অক্টোপাস। এই বিরল দৃশ্য দেখে তারা এটিকে “শার্কটোপাস” নাম দেন।
মায়োরি অক্টোপাস, যা *Octopus maorum* নামেও পরিচিত, দক্ষিণ গোলার্ধের সবচেয়ে বড় অক্টোপাস প্রজাতি। কনস্টানটাইন আরও জানান, “আমরা দেখেছি অক্টোপাসটি হাঙরের মাথার অনেকটা জায়গা জুড়ে ছিল”।
সাধারণত, অক্টোপাস সমুদ্রের তলদেশে থাকতে পছন্দ করে, যেখানে শর্টফিন মাকো হাঙরের আনাগোনা খুবই কম দেখা যায়। ফলে, এই ঘটনাটি বিজ্ঞানীদের কাছে আরও বেশি কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।
গবেষকরা প্রায় ১০ মিনিটের মতো সময় ধরে এই দৃশ্যটি পর্যবেক্ষণ করেন। কনস্টানটাইন বলেন, “আমরা জানি না এর পরে কি ঘটেছিল, তবে সম্ভবত অক্টোপাসটির জন্য এটি খুবই আনন্দের একটি অভিজ্ঞতা ছিল, কারণ বিশ্বের দ্রুততম হাঙর প্রজাতি ঘণ্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার বেগে সাঁতার কাটতে পারে”।
এই ঘটনা সমুদ্র এবং এর জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাকেই প্রকাশ করে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলো সমুদ্রের গভীরের অজানা জগৎ সম্পর্কে আরও অনেক নতুন তথ্য সরবরাহ করে। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, এখনো অনেক কিছুই আমাদের অজানা এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে হাঙরের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রাণীদের ভূমিকা অপরিসীম।
“শার্কটোপাসের” এই অভিজ্ঞতা সমুদ্রের বিস্ময়কর জগৎকে নতুন করে তুলে ধরেছে। সামুদ্রিক বিজ্ঞানীদের জন্য এমন অপ্রত্যাশিত দৃশ্য দেখা একটি নিয়মিত ঘটনা।
তাই, সমুদ্রের এই অসাধারণ মুহূর্তগুলো ধরে রাখতে এবং এর সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসা উচিত।
তথ্য সূত্র: The Guardian