কোম্পানি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে মানুষ: ‘সেভারেন্স’ সিজন ২!

বাণিজ্যিক দুনিয়ায় কর্মীদের প্রতি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নির্মিত ‘সেভারেন্স’ (Severance) নামক টিভি সিরিজটি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। অ্যাপল টিভি প্লাস-এ প্রচারিত এই সিরিজের দ্বিতীয় সিজনে কর্পোরেট সংস্কৃতির নানা দিক উন্মোচন করা হয়েছে, যা দর্শকদের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

একদিকে যেমন কর্মীদের শোষণ, তেমনি কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতার চিত্র এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সিরিজটি বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময়ে মুক্তি পাওয়ায়, এর বিষয়বস্তু আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

সিরিজটির গল্পে দেখা যায়, ‘লুমন’ নামক একটি কাল্পনিক কর্পোরেশন তাদের কর্মীদের স্মৃতিকে এমনভাবে বিভক্ত করে দেয়, যাতে অফিসের কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে কোনো সম্পর্ক না থাকে। কর্মী হরমনি কোবেলের (প্যাট্রিসিয়া আ workেট) চরিত্রটি এই সিরিজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

কোবেল তার পুরোনো চাকরিটি ধরে রাখতে চান, কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। এই ঘটনা কর্তৃপক্ষের স্বার্থপরতা এবং কর্মীদের প্রতি তাদের মনোভাবের একটি স্পষ্ট উদাহরণ।

আসলে, ‘সেভারেন্স’ সিরিজটি বর্তমান কর্পোরেট সংস্কৃতির একটি প্রতিচ্ছবি। যেখানে কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয় না, বরং তাদের ব্যবহার করা হয়।

কাজের চাপ, কম বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার মতো বিষয়গুলো এখানে তুলে ধরা হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর পর কর্মীদের মধ্যে ‘কুইট কুইটিং’-এর প্রবণতা দেখা যায়, যেখানে তারা কাজের প্রতি আগ্রহ হারাতে শুরু করে এবং ব্যক্তিগত জীবনকে গুরুত্ব দেয়।

এছাড়া, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন এবং কর্মীদের ধর্মঘটের ঘটনাও কর্পোরেট সংস্কৃতির বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের প্রমাণ।

সিরিজটিতে কর্পোরেট জগতের আকর্ষণীয় দিকগুলো – যেমন বিনামূল্যে খাবার বা বিনোদন – কর্মীদের কাজের প্রতি আকৃষ্ট করার কৌশল হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাস্তবেও, অনেক কোম্পানি কর্মীদের বেতন না বাড়িয়ে এই ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের সন্তুষ্ট রাখতে চায়।

‘সেভারেন্স’ শুধু কর্পোরেট সংস্কৃতির বিদ্রূপই করে না, বরং এর পেছনের অন্ধকার দিকগুলোও উন্মোচন করে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই এই সিরিজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন এবং তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে এর মিল খুঁজে পাচ্ছেন। কর্মীদের মধ্যে এই সিরিজটি নিয়ে আগ্রহ তৈরি হওয়ার কারণ হলো, এটি কর্পোরেট সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদের ভাষা।

‘সেভারেন্স’-এর নির্মাতারা কর্পোরেট বিশ্বের এই দিকটি তুলে ধরার জন্য বাস্তব ঘটনা ও কর্মীদের অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা নিয়েছেন। তারা দেখিয়েছেন, কীভাবে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ভিন্নমত পোষণকারীদের দমন করে এবং তাদের শোষণ করে।

এই সিরিজে কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে, যা দর্শকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দেয়।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *