যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্তে অবস্থিত একটি বিশেষ লাইব্রেরিতে কানাডীয় নাগরিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই ঘটনায় কুইবেকের সীমান্তবর্তী শহরসহ কানাডাজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
হ্যাসকেল ফ্রি লাইব্রেরি ও অপেরা হাউস (Haskell Free Library and Opera House) নামের এই স্থানটি কানাডার কুইবেক প্রদেশের স্ট্যানস্টেড (Stanstead) এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট অঙ্গরাজ্যের ডার্বি লাইন-এর (Derby Line) মাঝে অবস্থিত। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যেকার বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিল।
লাইব্রেরির প্রবেশপথ যুক্তরাষ্ট্রের দিকে হলেও এর প্রায় ৬০ শতাংশ স্থান, যার মধ্যে বইয়ের সংগ্রহও রয়েছে, তা কানাডার অংশে অবস্থিত। এমনকি, অপেরা হাউসের দর্শক আসনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অংশে এবং মঞ্চ কানাডায় অবস্থিত।
নতুন নিয়মানুযায়ী, এখন থেকে কানাডীয় নাগরিকদের লাইব্রেরিতে প্রবেশ করতে হলে আনুষ্ঠানিক সীমান্ত পার হতে হবে। এতদিন তারা যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে লাইব্রেরিতে প্রবেশ করতে পারতেন।
কুইবেকের স্ট্যানস্টেড শহরের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই পদক্ষেপ শুধু দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ঐতিহাসিক নিদর্শনস্বরূপ এই লাইব্রেরিতে কানাডীয়দের প্রবেশাধিকারকেই খর্ব করে না, বরং এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সীমান্ত সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের চেতনাকেও দুর্বল করে।”
যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (US Customs and Border Protection) বিভাগ তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে, দেশটির স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে জানান, মাদক পাচার প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
মুখপাত্রের দাবি, “কানাডীয়রা শুল্ক কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে লাইব্রেরিতে প্রবেশ করতে পারতেন, যা মাদক পাচারকারীদের সুবিধা করে দিচ্ছিল। আমরা এখন এই সুযোগ বন্ধ করছি এবং আমেরিকানদের সুরক্ষা দিচ্ছি।”
যদিও যুক্তরাষ্ট্র মাদক পাচারের কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। এমনকি, তারা এ বিষয়ে অতিরিক্ত কোনো তথ্যও দিতে রাজি হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে এক কুইবেকের নাগরিক অ্যালেক্সিস ভ্লাচোস (Alexis Vlachos) যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে দোষ স্বীকার করেছিলেন। তিনি লাইব্রেরির মাধ্যমে হ্যান্ডগান (handgun) পাচারের চেষ্টা করেছিলেন। পরে তাকে ৫১ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা শীতল হয়েছে। একসময় দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত পারাপারের ক্ষেত্রে সহজ নিয়ম ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই লাইব্রেরিটি ছিল বন্ধুত্বের প্রতীক, যা ১৯০০ সালের দিকে স্থানীয় একটি পরিবার নির্মাণ করে উভয় দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন।
শুক্রবার (Friday) লাইব্রেরির বাইরে কিছু আমেরিকান ও কানাডীয় নাগরিক এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। ভার্মন্টের ডেমোক্রেট সিনেটর পিটার ওয়েলচ (Senator Peter Welch) এই ঘটনাকে “উদ্বেগজনক” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, “ভার্মন্ট কানাডাকে ভালোবাসে। এই যৌথ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আমাদের দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্কের উদযাপন।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান