মার্কিন বাজার: ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে বিশ্ব কাঁপছে, বিনিয়োগে কী প্রভাব?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে অস্থিরতা, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ইউরোপ ও এশিয়ায়।

যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার একসময় বিশ্ব অর্থনীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিল। কিন্তু এখন সেই বাজারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির কারণে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। ফলে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা বিকল্প বাজার খুঁজছেন, বিশেষ করে ইউরোপ ও এশিয়ার দিকে ঝুঁকছেন তারা।

ব্যাংক অফ আমেরিকার এক জরিপ বলছে, ১৯৯৯ সাল থেকে তথ্য সংগ্রহ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম মার্কিন শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি কমেছে। অন্যদিকে, ইউরোপের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ বেড়েছে, যা ২০২১ সালের পর সর্বোচ্চ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির শ্রেষ্ঠত্বের দিন হয়তো শেষ হতে চলেছে। গত দুই বছরে এস এন্ড পি ৫০০ সূচক উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়লেও, অনেক বিনিয়োগকারী আগামী বছর ভালো ফল পাওয়া নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। এখন ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এবং পররাষ্ট্রনীতির কারণে মার্কিন বাজারের স্থিতিশীলতা নিয়ে তাদের মধ্যে সন্দেহ বাড়ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজার কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। এমনকি চীন, ইউরোপ এবং মেক্সিকোর মতো দেশগুলোর বাজারও ভালো করছে।

তুলনামূলকভাবে, ইউরোপের বাজার এখন বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীল হিসেবে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ইউক্রেন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াচ্ছে, যা ইউরোপের শেয়ার বাজারের জন্য ইতিবাচক। জার্মানির রাজনৈতিক পরিবর্তনেও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। নতুন চ্যান্সেলর ফ্রাডরিখ মার্চ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর একটি ঐতিহাসিক পরিকল্পনা সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, যা দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসকে আরও শক্তিশালী করেছে। জার্মানির ড্যাক্স সূচক এ বছর ১৫ শতাংশ বেড়েছে।

অন্যদিকে, প্রযুক্তি খাতের শেয়ারগুলোও ভালো করতে পারছে না। ‘ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন’ খ্যাত প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে মেটা বাদে সবার শেয়ারের দাম কমেছে। অ্যালফাবেট, অ্যামাজন, অ্যাপল, এনভিডিয়া এবং টেসলার মতো কোম্পানির শেয়ারের দাম এ বছর ১০ শতাংশের বেশি কমেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি বাজারের জন্য উদ্বেগের কারণ। এছাড়াও, প্রযুক্তি খাতের দুর্বলতা এবং চীনের বাজারের উত্থানও পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করছে। চীনের সরকারও তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে খরচ বাড়ানোর জন্য একটি বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে, যার ফলস্বরূপ দেশটির শেয়ার বাজার ঊর্ধ্বমুখী।

বাজারের এই অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। তারা এখন অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল এবং লাভজনক বাজারের দিকে ঝুঁকছেন। তবে, বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এখনো শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *