মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গবেষকদের একটি দল অভিযোগ করেছেন যে, দেশটির সরকার তাদের একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা থেকে যৌন অভিমুখীতা সম্পর্কিত তথ্য সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছে। গবেষণাটি মূলত গ্রামীণ অঞ্চলের তরুণদের ধূমপান বিষয়ক একটি সমীক্ষা ছিল।
ক্যালিফোর্নিয়ার এই গবেষকদের আরও জানানো হয়, তাদের গবেষণাপত্র থেকে ‘লিঙ্গ’, ‘সিস্টেন্ডার’ এবং ‘ন্যায্য’ শব্দগুলোও বাদ দিতে হবে।
গবেষক দলের প্রধান, টামার আন্টিন এবং রাচেল আনেকিন তাদের ব্লগ পোস্টে জানিয়েছেন, তাঁদের এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশের কারণে। ট্রাম্পের ওই আদেশে সরকারি প্রকাশনা থেকে ‘লিঙ্গ বিষয়ক ধারণা’ সরিয়ে ফেলার কথা বলা হয়।
এর প্রতিক্রিয়ায়, গবেষকরা ‘পাবলিক হেলথ রিপোর্টস’-এ তাদের গবেষণাপত্রটি জমা দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। উল্লেখ্য, ‘পাবলিক হেলথ রিপোর্টস’ হলো যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল এবং জনস্বাস্থ্য বিভাগের আনুষ্ঠানিক জার্নাল।
আন্টিন আরও জানান, তাঁদের গবেষণা দলের পক্ষ থেকে এখন অন্য কোনো মাধ্যমে তাঁদের এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি অন্যান্য গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁরা যেন সরকারি জার্নালে লেখা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকেন, যাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এড়ানো যায়।
আন্টিন বলেন, “সাধারণ সময়ে এমন ঘটনা ঘটার কোনো সুযোগ নেই। আমার জানা মতে, আগে কখনো কোনো গবেষককে এমন নির্দেশ দেওয়া হয়নি, যেখানে হোয়াইট হাউজের নির্বাহী আদেশের কারণে কোনো শব্দ, শব্দগুচ্ছ বা ডেটা সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। এটা খুবই অস্বাভাবিক।”
ব্লগ পোস্টে প্রকাশিত স্ক্রিনশটগুলোতে দেখা যায়, গবেষণায় ‘ straight or heterosexual’, ‘gay or lesbian’, ‘bisexual’ এবং ‘unknown’-এর মতো বিষয়গুলো থেকে ডেটা সরানোর কথা বলা হয়েছে। সেখানে একটি নোটে লেখা ছিল: “নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, আমরা লিঙ্গ সম্পর্কিত কোনো তথ্য যুক্ত করতে পারব না।”
আন্টিনের মতে, গ্রামীণ তরুণদের ধূমপানের সঙ্গে লিঙ্গ এবং যৌন অভিমুখীতার সম্পর্ক বোঝা গেলে, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বার্তাগুলো আরও কার্যকরভাবে তৈরি করা সম্ভব হবে। গবেষণায় এই ধরনের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা দীর্ঘদিনের রীতি।
গবেষক টামার আন্টিন আরও বলেন, “সেন্সরশিপ বৈজ্ঞানিক গবেষণার স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলে। এছাড়া, এটি মার্কিন স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের নীতিরও লঙ্ঘন, যেখানে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বৈজ্ঞানিক ফলাফলকে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত, বিলম্বিত বা পরিবর্তন করা যাবে না।”
এ বিষয়ে মার্কিন স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের মুখপাত্র অ্যান্ড্রু নিক্সন জানান, “বিজ্ঞানকে তার স্বর্ণের মানদণ্ডে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, যাতে বিজ্ঞানের স্বাধীনতা বজায় থাকে। পাবলিক হেলথ রিপোর্টসে প্রকাশিত সমস্ত গবেষণাপত্রকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ মেনে চলতে হবে।”
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে।