কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়: ট্রাম্প প্রশাসনের শর্তে নতি স্বীকার, ৪০ কোটি ডলারের তহবিল পুনরুদ্ধারের পথে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের শর্ত মেনে অবশেষে ৪০ কোটি ডলারের ফেডারেল তহবিল পুনরুদ্ধারের পথে হাঁটছে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। গত মাসে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে হওয়া ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের সময় ইহুদি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার অভিযোগে এই তহবিল প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল।
নতুন শর্ত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভের সময় মুখ ঢাকা নিষিদ্ধ করতে এবং শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করার বিশেষ ক্ষমতা সহ ৩৬ জন ক্যাম্পাস পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে রাজি হয়েছে। এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকান স্টাডিজ বিভাগ ও প্যালেস্টাইন স্টাডিজ সেন্টারের কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের জন্য একজন নতুন সিনিয়র প্রোভোস্ট নিয়োগ করা হবে।
গত বছর, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলের গাজায় আক্রমণকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও এর ব্যতিক্রম ছিল না। গত ৩০শে এপ্রিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অ্যালামনাইদের একটি দল অবস্থান নেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে নিউইয়র্ক পুলিশ তাদের জোর করে সরিয়ে দেয়।
ট্রাম্প প্রশাসন বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেয় এবং এতে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিতাড়িত করারও হুমকি দেয়।
ফেডারেল তহবিল পুনরায় পাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে কিছু শর্ত দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল, ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা, ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের নিয়ম তৈরি করা, মুখ ঢাকা নিষিদ্ধ করা এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিভাগের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা।
বর্তমানে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল, যিনি ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাকে নিউইয়র্কের একটি আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টরা। তারা জানায়, খলিলের গ্রিন কার্ড বাতিল করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রসচিব ক্রিস্টি নোয়েম এক বিবৃতিতে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও পড়াশোনার জন্য ভিসা পাওয়া একটি বিশেষ অধিকার। কেউ যদি সহিংসতার পক্ষে কথা বলে, তবে সেই অধিকার বাতিল করা উচিত।
এছাড়াও, গত ১০ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ কলম্বিয়াসহ ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়ে “ইহুদি-বিদ্বেষী হয়রানি ও বৈষম্য”-এর অভিযোগের তদন্তের কথা জানায় এবং ইহুদি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়।
সরকারের দাবিগুলো মেনে নিতে শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের কাছে একটি নতুন স্মারক পাঠায় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সমালোচকদের মতে, এই পদক্ষেপগুলো শিক্ষাগত স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের অধিকারের পরিপন্থী।
ডেমোক্রেসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাউ (ডিএডব্লিউএন)-এর নির্বাহী পরিচালক সারা লেহ হুইটসন বলেন, “সরকারের এই শর্তগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে চলবে, কী পড়ানো হবে এবং কাকে কথা বলতে দেওয়া হবে—সেগুলোর ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার শামিল।
তিনি সতর্ক করে বলেন, কলম্বিয়ার এই পদক্ষেপ একটি ‘ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত’ স্থাপন করবে এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাগত স্বাধীনতা খর্ব হবে।
আল-শাবাকা: প্যালেস্টাইন পলিসি নেটওয়ার্কের মার্কিন নীতি ফেলো তারিক কেনি-শাওয়া বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ ‘একেবারেই হাস্যকর’। তার মতে, বিশ্ববিদ্যালয়টি ‘একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে তার বৈধতা ও স্বাধীনতা বিক্রি করছে’।
তবে সরকারের দাবি মেনে নিলেও, এর ফলে ফেডারেল তহবিল ফিরে আসবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, তাদের শর্ত পূরণ করা আলোচনার ‘পূর্বশর্ত’ হিসেবে বিবেচিত হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা