মা কি ভালোবাসে? প্রতারণার ভয়ঙ্কর জালে এক ছেলের হৃদয় বিদারক গল্প!

শেফের জীবন: মায়ের প্রতারণার শিকার, ভালোবাসার নামে ধ্বংসলীলা।

ছেলেবেলায় মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত, কঠিন এক জীবন কাটানো গ্রাহাম হর্নিগোল্ড-এর জীবন বদলে যায় ২০২০ সালে। বিশ্বখ্যাত একটি বেকারি চেইন-এর মালিক এবং জুনিয়র বেক অফ-এর বিচারক হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তির জীবনে আসে এক অপ্রত্যাশিত চিঠি।

চিঠিতে লেখা ছিল, ‘আমি তোমার মা, ডিওন’। এরপর শুরু হয় এক ভয়ংকর প্রতারণার জাল, যা ছিন্নভিন্ন করে দেয় গ্রাহামের সাজানো সংসার।

ঘটনার সূত্রপাত হয় জার্মানির একটি সেনাঘাঁটিতে, যেখানে ১৯৭৪ সালে জন্ম হয় গ্রাহামের। শৈশবে মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত গ্রাহাম বাবার কাছে মানুষ হন, যিনি ছিলেন কঠোর প্রকৃতির।

মায়ের বিষয়ে তেমন কিছুই জানা ছিল না তার। মায়ের অভাব পূরণের চেষ্টা করেছেন তিনি, ভালোবাসার মানুষ খুঁজেছেন। এরই মাঝে ডিওনের আগমন যেন এক অপ্রত্যাশিত ঝড়।

ডিওন জানান, তিনি দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন এবং মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় তাঁর ব্যবসা রয়েছে। তিনি ব্রুনাইয়ের প্রাক্তন সুলতানের অবৈধ সন্তান ছিলেন, এমন দাবিও করেন।

এরপর গ্রাহামের সঙ্গে দেখা করতে এসে তিনি জানান, তাঁর ক্যান্সার হয়েছে এবং বেশি দিন বাঁচবেন না। দ্রুত তিনি গ্রাহামকে কাছে টানতে শুরু করেন।

প্রথমে গ্রাহামকে একটি রেঞ্জ রোভার গাড়ি কিনে দেন ডিওন, পরে গ্রাহামের সঙ্গিনী হিদার কানিউককেও একটি বিএমডব্লিউ উপহার দেন। এরপর ডিওন তাদের সঙ্গে বসবাস করতে শুরু করেন।

যদিও এর কিছুদিন পরই ডিওনের আসল রূপ প্রকাশ হতে শুরু করে। তিনি গ্রাহামের সঙ্গে মিলে সুইজারল্যান্ডে যান, সেখানে ব্যাংক হিসাব খোলার কথা বলেন। এরপর তাদের ব্যবসার জন্য অন্যদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে শুরু করেন, কিন্তু সেই টাকা নিজের বিলাসিতায় খরচ করতে থাকেন।

গ্রাহামের বন্ধু জুয়ান এই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং জানান ডিওন একজন প্রতারক। এরপরেই জানা যায়, ডিওন এর আগেও বিভিন্ন প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

হিদার জানতে পারেন, গ্রাহাম তাদের যৌথ অ্যাকাউন্ট থেকে মায়ের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেছেন এবং ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও অনেক বিল পরিশোধ করেছেন। ডিওনের প্রতারণার কারণে এক পর্যায়ে গ্রাহামের সঙ্গে হিদারের সম্পর্ক ভেঙে যায়।

প্রকৃতপক্ষে, ডিওন ভালোবাসার মোড়কে গ্রাহামের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করতে এসেছিলেন। তিনি গ্রাহামের দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছিলেন, যা ছিল এক ভয়ংকর প্রতারণা।

ডিওনের এই প্রতারণার শিকার হয়ে গ্রাহাম মানসিক ও আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হন।

এই ঘটনার পর গ্রাহাম মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি তাঁর অতীতের সেই কষ্টকর দিনগুলো থেকে মুক্তি পেতে চেষ্টা করছেন।

তিনি এখন তাঁর সন্তানের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন এবং খুব শীঘ্রই তার সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা করছেন।

গ্রাহাম হর্নিগোল্ডের জীবনের এই ঘটনাটি সম্প্রতি ‘কন মাদার’ নামে একটি নেটফ্লিক্স ডকুমেণ্টারিতে তুলে ধরা হয়েছে। এই ঘটনা আমাদের সমাজে মা ও সন্তানের সম্পর্কের গভীরতা এবং প্রতারণার ভয়াবহতা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শেখায়।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *