ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং: ঘৃণা! ডায়েট নয়, খাদ্যাভ্যাসে ফিরুন, বলছেন ওটোলেংঘি

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং: ডায়েটের নামে বিভ্রান্তি? খাদ্য ও সংস্কৃতির গুরুত্ব নিয়ে সেলিব্রিটি শেফের মতামত।

বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের ডায়েটের চল। ওজন কমানো থেকে শুরু করে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে মানুষজন ঝুঁকছে নানান পদ্ধতির দিকে। কিন্তু এই ডায়েটগুলি কি সত্যিই আমাদের শরীরের জন্য উপকারী?

সম্প্রতি, বিখ্যাত শেফ ইয়োটাম ওটোলেঙ্গি এই বিষয়ে তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা মাঝে মাঝে উপবাস করার পদ্ধতি নিয়ে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং ডায়েট বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারণা নিয়ে আজকের আলোচনা।

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের ধারণাটি অনেকের কাছেই নতুন নয়। এই পদ্ধতিতে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাবার গ্রহণ করা হয় এবং বাকি সময় উপবাস করা হয়। ওটোলেঙ্গিও এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন, কারণ ইন্টারনেটে এর অনেক সুবিধা সম্পর্কে তিনি জানতে পেরেছিলেন।

ওজন কমানো থেকে শুরু করে শরীরের কোষ মেরামত করা এবং হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মতো সমস্যাগুলো কমাতে এই পদ্ধতি সাহায্য করে বলে শোনা যায়।

কিন্তু ওটোলেঙ্গির অভিজ্ঞতা ছিল ভিন্ন। তিনি জানান, প্রথম দিকে হয়তো কিছু ভালো লেগেছিল, কিন্তু ১৬ ঘণ্টা উপবাসের পর তিনি খুব ক্ষুধার্ত হয়ে পড়তেন। এরপর বেশি খাবার খাওয়ার ফলে তার শরীরে মেদ জমতে শুরু করে এবং ওজনও বেড়ে যায়।

ডায়েটের নামে এই ধরনের কঠোর নিয়ম-কানুন তার মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলেছিল। তাই তিনি মনে করেন, ডায়েটের নামে শরীরের প্রতি এত মনোযোগ দেওয়ার চেয়ে বরং খাবারের সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

ওটোলেঙ্গি ‘নিউট্রিয়েনিজম’-এর ধারণাটির সমালোচনা করেছেন। তার মতে, খাবারে পুষ্টির উপাদানগুলো আলাদা করে দেখার পরিবর্তে খাবারের সামগ্রিক দিকটা দেখা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, একটি আলুর কথা ধরুন।

একে শর্করা ও ফাইবারের মতো পুষ্টির উপাদান হিসেবে না দেখে বরং একটি সম্পূর্ণ খাবার হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। খাবারকে কেবল পুষ্টির মান দিয়ে বিচার করা হলে, অনেক সময় তা আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি অবিচার করে।

অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার (ultra-processed foods) সম্পর্কে ওটোলেঙ্গি সতর্ক করেছেন। বাজারে সহজলভ্য এই খাবারগুলোতে স্বাদ ও সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ফাস্ট ফুড, রেডি-টু-ইট খাবার এবং বিভিন্ন প্যাকেটজাত খাবারে এই ধরনের উপাদান পাওয়া যায়। আমাদের দেশের খাদ্য সংস্কৃতিতে সবসময়ই টাটকা ও প্রাকৃতিক খাবারের প্রাধান্য ছিল।

ভাত, ডাল, মাছ, সবজি – এই খাবারগুলো আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ওটোলেঙ্গি মনে করেন, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের ঐতিহ্যকে ভুলে গেলে চলবে না। পরিবারের সাথে বসে খাবার খাওয়া, রান্নার আনন্দ উপভোগ করা এবং পছন্দের খাবার তৈরি করা – এগুলো আমাদের সুস্থ জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের খাদ্য সমাধান খুঁজতে হবে না, কারণ সেগুলো আমাদের হাতের কাছেই আছে।

ডায়েটের নামে বিভিন্ন নিয়ম-কানুন অনুসরণ করার চেয়ে বরং আমাদের খাদ্য সংস্কৃতির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। পরিবারের জন্য রান্না করুন, অন্যদের সাথে খাবার ভাগ করে নিন এবং খাবারের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করুন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য এটিই সবচেয়ে ভালো উপায়।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *