জর্জ ফোরম্যান: বক্সিং জগৎ থেকে সাফল্যের শিখরে!

**জর্জ ফোরম্যান: এক সংগ্রামী বক্সারের জীবন, যিনি জয় করেছেন দুইবার**

খেলাধুলা জগতে এমন কিছু ব্যক্তিত্ব আছেন, যারা শুধু তাদের ক্রীড়া নৈপুণ্যের জন্য নয়, বরং জীবন সংগ্রামের দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমেও মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেন।

জর্জ ফোরম্যান ছিলেন তেমনই একজন, যিনি বক্সিংয়ের রিংয়ে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন এবং জীবনের নানা বাঁকে জয় করেছেন অসংখ্য বাধা।

সম্প্রতি, ৭৬ বছর বয়সে এই কিংবদন্তী ক্রীড়াবিদের প্রয়াণ ঘটেছে, যা বিশ্বজুড়ে ক্রীড়াপ্রেমীদের শোকের ছায়া ফেলেছে।

১৯৪৯ সালে টেক্সাসের মার্শাল-এ জন্ম নেওয়া ফোরম্যানের শৈশব ছিল কষ্টের।

স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্তের সঙ্গে মিশে তিনি কিশোর অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

১৬ বছর বয়সে স্কুল ছাড়ার পর তিনি ‘জব কর্পস’-এ নাম লেখান, যা তার জীবন পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।

এখানেই তিনি বক্সিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং নিজেকে এই খেলার জন্য উৎসর্গ করেন।

১৯৬৮ সালের মেক্সিকো অলিম্পিকে ফোরম্যান স্বর্ণপদক জয় করেন, যা তার পেশাদার বক্সিং ক্যারিয়ারের সূচনা করে।

এরপর দ্রুতই তিনি হেভিওয়েট বিভাগে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন।

তার বিধ্বংসী ঘুষিগুলো প্রতিপক্ষের জন্য এক বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

১৯৭৪ সালে জায়ারের (বর্তমান কঙ্গো) কিনশাসায় অনুষ্ঠিত ‘রাম্বল ইন দ্য জাংগল’ লড়াইয়ে তিনি তৎকালীন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, মোহাম্মদ আলীর মুখোমুখি হন।

এই লড়াই শুধু বক্সিং ইতিহাসের পাতায় নয়, বরং ক্রীড়াঙ্গনের বাইরেও আলোড়ন তুলেছিল।

আলী ছিলেন দর্শকদের প্রিয়, আর ফোরম্যানকে দেখা হতো এক আগ্রাসী যোদ্ধা হিসেবে।

হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর আলী জয়ী হন, কিন্তু ফোরম্যানের মনোবল এতটুকুও কমেনি।

১৯৭৭ সালে পরাজয়ের পর ফোরম্যান বক্সিং থেকে অবসর নেন এবং ধর্মচর্চায় মনোনিবেশ করেন।

এরপর তিনি যাজক হিসেবেও অভিষিক্ত হন।

তবে, তার জীবনের সবচেয়ে বড় চমক ছিল, ১৯৯০-এর দশকে তার বক্সিংয়ে ফিরে আসা।

৪৫ বছর বয়সে তিনি মাইকেল মূরারকে পরাজিত করে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন, যা বক্সিং ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা।

এই জয় প্রমাণ করে, বয়স কোনো বাধা নয়, ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে কোনো কিছুই জয় করা সম্ভব।

বক্সিংয়ের বাইরেও ফোরম্যান একজন সফল উদ্যোক্তা ছিলেন।

তার ‘জর্জ ফোরম্যান গ্রিল’ বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে, যা তাকে এনে দেয় বিপুল খ্যাতি ও অর্থ।

এছাড়া, তিনি টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ও ক্রীড়া ভাষ্যকার হিসেবেও পরিচিতি পান।

ফোরম্যানের জীবনের গল্প শুধু বক্সিংয়ের গল্প নয়, এটি হলো ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প, সাফল্যের গল্প, এবং মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়ার গল্প।

তার এই সংগ্রামী জীবন বাংলাদেশের মানুষের কাছেও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *