যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে কি এক নতুন যুদ্ধ? ‘গোল্ডেন ডোম’ নিয়ে তোলপাড়!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘গোল্ডেন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা: প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ ও ব্যয়ের হিসাব

যুক্তরাষ্ট্র একটি অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির পরিকল্পনা করছে, যা ‘গোল্ডেন ডোম’ নামে পরিচিত। ইসরায়েলের আয়রন ডোম-এর ধারণার ওপর ভিত্তি করে এই ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে, তবে এটি অনেক বেশি বিস্তৃত হবে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই প্রকল্পের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন এবং এর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে প্রস্তুত রয়েছেন। তবে, এই প্রকল্পের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং বিশাল ব্যয়ের বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা গভীর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

পেন্টাগন সূত্রে খবর, ২০২৬ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের জন্য বাজেট তৈরি করতে বলা হয়েছে।

কিন্তু এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি কেমন হবে, সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। কর্মকর্তারা বলছেন, গোল্ডেন ডোম একটি ধারণামাত্র। সম্ভবত এমন কিছু প্রযুক্তি তৈরির চেষ্টা চলছে, যা ভবিষ্যতে এই প্রকল্পে ব্যবহার করা যেতে পারে।

তবে, এখন পর্যন্ত আলোচনাগুলো কেবল ধারণাগত পর্যায়েই রয়েছে।

প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এক সূত্র জানাচ্ছে, এর সম্ভাব্য খরচ নির্ধারণ করা কঠিন, তবে এটি নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে কয়েক বিলিয়ন ডলার লাগতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইসরায়েলের আয়রন ডোমের মতো একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা জরুরি।

তবে, দুটি ব্যবস্থার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। ইসরায়েলের আয়রন ডোম একটি ছোট ভূখণ্ডের জন্য স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র থেকে সুরক্ষা দেয়, যেখানে ‘গোল্ডেন ডোম’-এর লক্ষ্য হলো পুরো যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) এবং শব্দের চেয়ে দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষা করা।

ইসরায়েল আকারে ছোট হওয়ায় সেখানে রাডার এবং ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা স্থাপন করা সহজ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশাল দেশে এটি করা অত্যন্ত কঠিন।

কারণ, আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যেকোনো স্থান থেকে, এমনকি কানসাস রাজ্যের ওপর দিয়েও প্রবেশ করতে পারে।

ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম সপ্তাহেই তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে একটি পরিকল্পনা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। যদিও পেন্টাগন কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা এই প্রকল্পের ওপর কাজ করছেন, তবে এর অগ্রগতি এখনো অনেক দূরে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, তাঁরা শিল্পখাত এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের সঙ্গে কাজ করছেন।

তবে, এই প্রকল্পের জন্য কত অর্থ বরাদ্দ করা হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

সাবেক নৌ-প্রশাসক মার্ক মন্টগোমারি মনে করেন, একটি কার্যকর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে ৭ থেকে ১০ বছর সময় লাগতে পারে। এমন একটি ব্যবস্থা সম্ভবত শুধু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন এবং প্রধান শহরগুলোকে রক্ষা করতে পারবে।

এদিকে, অস্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো এই প্রকল্প থেকে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। মিসাইল ডিফেন্স এজেন্সি ইতোমধ্যে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করেছে।

লকহিড মার্টিন-এর মতো বৃহৎ কোম্পানিগুলো তাদের সক্ষমতা তুলে ধরেছে।

তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ব্যবস্থা তৈরি করা অত্যন্ত কঠিন।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাশিয়া বা চীনের মতো শক্তিশালী দেশের বিরুদ্ধে কার্যকর নয়। কারণ, এই ব্যবস্থা সীমিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সক্ষম।

উদাহরণস্বরূপ, গ্রাউন্ড-বেইজড মিডকোর্স ডিফেন্স (জিএমডি) ব্যবস্থা পরীক্ষার সময় প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহাকাশে ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা স্থাপন করলে তা শত্রুদের অ্যান্টি-স্যাটেলাইট হামলার শিকার হতে পারে।

এছাড়া, এই ধরনের ব্যবস্থা তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ হবে আকাশছোঁয়া।

অন্যদিকে, সমালোচকরা বলছেন, এই ধরনের প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করা হলেও তা খুব বেশি কাজে আসবে না।

কারণ, শত্রুরা ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা বাড়িয়ে এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন, ‘গোল্ডেন ডোম’ তৈরি হলে তা পারমাণবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

কারণ, এই ব্যবস্থা তৈরি হলে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো পারমাণবিক হামলার ঝুঁকি ছাড়াই অন্য কোনো দেশে আক্রমণ করতে পারবে।

প্রযুক্তিগতভাবে, কৌশলগতভাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে এই প্রকল্পের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

জন টিয়ার্নি

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *