কৃষ্ণাঙ্গ সংস্কৃতির গল্প: লন্ডন ছাড়িয়ে আরও কিছু

শিরোনাম: লন্ডন কেন্দ্রিকতার বাইরে: ব্রিটেনের কালো সংস্কৃতির এক ভিন্ন চিত্র

ব্রিটিশ সংস্কৃতির আলোচনা সাধারণত লন্ডনের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকে।

কিন্তু সেখানকার বাইরের চিত্রটা কেমন?

ব্রিটেনের কালো সংস্কৃতি শুধু রাজধানী শহরটিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর বিস্তৃতি রয়েছে সারা দেশে।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে ১৯৭০ ও ১৯৮০ এর দশকে ব্রিটেনের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি, সংগ্রাম এবং সাফল্যের গল্পগুলো নতুন করে উপস্থাপন করা হয়েছে।

প্রবন্ধে লেখক টনি পামার এর “দ্য উইগান ক্যাসিনো” নামক একটি চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা শুরু করেন।

চলচ্চিত্রটি ১৯৭০-এর দশকে উত্তর ইংল্যান্ডের একটি আন্ডারগ্রাউন্ড সংস্কৃতির চিত্র তুলে ধরেছিল, যেখানে হারিয়ে যাওয়া কিছু পুরনো গানের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে।

উইগান ক্যাসিনোতে আসা কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি লেখকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

তাদের মধ্যে কেউ ছিলেন নাচের পোশাকে সজ্জিত, আবার কারো ছিল বিশেষ ধরনের চুলের ছাঁট।

লেখকের মতে, এই দৃশ্যগুলো প্রমাণ করে যে, উত্তরাঞ্চলে শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক শ্রেণির বাইরেও কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষেরা ছিলেন, যারা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে বেড়ে উঠেছেন।

এই বিষয়টি আসলে মার্গারেট থ্যাচারের শাসনামলের ব্রিটেনের একটি ভিন্ন চিত্র।

প্রবন্ধে আরও বলা হয়, ব্রিটেনের সংস্কৃতি গঠনে কৃষ্ণাঙ্গ সংস্কৃতির অবদান অনস্বীকার্য।

সঙ্গীত, ফ্যাশন, খেলাধুলা, সাহিত্য, চলচ্চিত্র—সবকিছুতেই তাদের প্রভাব রয়েছে।

ড্যানিয়েল কালুইয়া, সিনথিয়া এরিভো, ডেভিড ওয়েলোও, লেটিটিয়া রাইট, জন বয়েগাদের মতো হলিউড তারকারা, নিকোলাস ড্যালি ও গ্রেস ওয়েলস বনারের মতো ডিজাইনার, সোনিয়া বয়েস ও জন আকোমরাহর মতো শিল্পীরা বিশ্বজুড়ে ব্রিটেনের প্রতিনিধিত্ব করছেন।

এমনকি ইংল্যান্ডের ফুটবল দলের অনেক খেলোয়াড়ও কৃষ্ণাঙ্গ বংশোদ্ভূত।

তবে, এই সংস্কৃতিচর্চা শুধু লন্ডন কেন্দ্রিক নয়।

১৯৭০ ও ১৯৮০ এর দশকে বার্মিংহাম, লিডস, শেফিল্ডের মতো শহরগুলোতেও কৃষ্ণাঙ্গ সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, বার্মিংহামে স্টুয়ার্ট হলের মতো শিক্ষাবিদ এবং রাস্টাফারিয়ানরা গণমাধ্যমে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।

লিডস ও শেফিল্ডে নতুন ধারার সঙ্গীতের জন্ম হয়েছে, যা কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিটিশদের আত্মবিশ্বাসের প্রতীক ছিল।

ঐতিহাসিকভাবে, ব্রিটেনের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষেরা নিজেদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সংগ্রাম করেছেন।

যেমন, ১৯৭৭ সালে লেউইশামে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়, যা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

এছাড়া, ১৯৮১ সালের দাঙ্গার সময় লিভারপুলের কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষজন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

ম্যানচেস্টারের মোস সাইডে একটি ক্লাব ছিল, যা কৃষ্ণাঙ্গ সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে কাজ করত।

তবে, ব্রিটেনের সংস্কৃতি এবং ইতিহাসে লন্ডনের বাইরে ঘটা এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো অনেক সময় উপেক্ষিত হয়।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ শতাংশ ব্রিটিশ তাদের দেশের কোনো কৃষ্ণাঙ্গ ঐতিহাসিক ব্যক্তির নাম বলতে পারে না।

এই শূন্যতা পূরণের জন্য প্রয়োজন লন্ডনের বাইরের গল্পগুলো তুলে ধরা, যা ব্রিটেনের সংস্কৃতিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

তথ্য সূত্র:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *