শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর ব্যবহার করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের একদল বিজ্ঞানী এমন এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর মানুষের শরীরে বাসা বাঁধা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি গন্ধের মাধ্যমে শনাক্ত করতে পারবে।
লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষকরা এই গবেষণাটি পরিচালনা করছেন। গবেষণা অনুযায়ী, ‘সিউডোমোনাস’ নামক ব্যাকটেরিয়া সনাক্ত করতে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কুকুর ব্যবহার করা হবে।
এই ব্যাকটেরিয়া নিউমোনিয়া, মূত্রনালীর সংক্রমণ এবং সেপটিসেমিয়ার মতো মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। সিস্টিক ফাইব্রোসিস (cystic fibrosis) রোগীদের জন্য এটি একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা।
সিস্টিক ফাইব্রোসিস হলো একটি বংশগত রোগ, যেখানে ফুসফুসে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা জমা হয় এবং এর ফলে ফুসফুসে সহজে সংক্রমণ হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে বর্তমানে অনেক ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে।
ফলে, রোগের চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে, কুকুরদের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করার নতুন এই পদ্ধতি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রশিক্ষিত কুকুর রোগীর জামাকাপড় অথবা মূত্রের নমুনা শুঁকে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সনাক্ত করতে সক্ষম হবে। এই পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয় সহজ হবে এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যাবে।
বর্তমানে, ব্যাকটেরিয়া সনাক্তকরণের প্রচলিত পদ্ধতিগুলো সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং অনেক ক্ষেত্রে রোগীর জন্য কষ্টকর। কুকুরের ঘ্রাণশক্তির মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া শনাক্তকরণের এই নতুন পদ্ধতি এইসব সীমাবদ্ধতা দূর করতে পারে।
গবেষকরা জানান, তারা এরই মধ্যে ল্যাবরেটরিতে ব্যাকটেরিয়ার নমুনা পরীক্ষা করে কুকুরের ঘ্রাণশক্তি যাচাই করেছেন এবং তাতে সাফল্য পেয়েছেন। এখন তারা মানুষের শরীরে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সনাক্ত করতে কুকুরদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
এই গবেষণার জন্য ‘সিস্টিক ফাইব্রোসিস ট্রাস্ট’ এবং ‘লাইফআর্ক’ নামক দুটি সংস্থা অর্থায়ন করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পদ্ধতি শুধু সিস্টিক ফাইব্রোসিসের রোগী নয়, বরং অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া সনাক্ত করতেও কাজে লাগবে।
এতে করে অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে রোগের দ্রুত চিকিৎসা করা সম্ভব হবে এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধের বিস্তারও কমানো যাবে। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ।
তাই, ব্যাকটেরিয়া সনাক্তকরণে কুকুরের এই বিশেষ ক্ষমতা নিঃসন্দেহে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান