চীন সফরে ট্রাম্পের দূত, ডেইনের সঙ্গে চীনা উপ-প্রধানের বৈঠক!

মার্কিন সিনেটর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক স্টিভ ডাইনেস চীন সফর করেছেন। বেইজিংয়ে তিনি চীনের ভাইস প্রিমিয়ার হে লিফেংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। শনিবারের এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য শুল্ক এবং অবৈধ ফেনটানিল ব্যবসার বিস্তার নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই আলোচনা হয়।

জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতাগ্রহণের পর ডাইনেস প্রথম কংগ্রেসম্যান যিনি চীন সফর করছেন। ভাইস প্রিমিয়ার হে লিফেং জানান, রবিবার ডাইনেসের চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে। বৈঠকে চীনের নীতি সম্পর্কে তাকে অবহিত করা হবে।

অতীতে আমেরিকান ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানি প্রোক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বলের হয়ে চীনের বাণিজ্যিক কেন্দ্র গুয়াংজুতে কাজ করেছেন ডাইনেস। তিনি জানান, এই নিয়ে তার ষষ্ঠ চীন সফর। ২০১৮ সালে তিনি সাংহাইয়ের কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি লি কিয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

ডাইনেস আরও বলেন, এই সফর এমন একটা সময়ে হচ্ছে যখন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করার আছে।

ডাইনেস বলেন, “আমি সবসময় গঠনমূলক আলোচনার ওপর বিশ্বাস করি এবং বহু বছর ধরে চীন সফরের অভিজ্ঞতা তাই বলে।”

বৈঠকের পর, চীনের মার্কিন দূতাবাস এক্সে (সাবেক টুইটার) জানায়, ডাইনেস চীনের প্রতি ট্রাম্পের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যাতে চীন থেকে ফেনটানিলের রাসায়নিক উপাদান সরবরাহ বন্ধ করা হয়। একইসঙ্গে তিনি দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা আরও বাড়ানোর আশা প্রকাশ করেন।

বৈঠকে ভাইস প্রিমিয়ার হে লিফেং জানান, চীন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য বিষয়ক বিষয়গুলোকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার তীব্র বিরোধী এবং পারস্পরিক সম্মান, সমতা ও সুবিধার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে অনেক অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে এবং তারা পারস্পরিক সাফল্যের জন্য অংশীদার ও বন্ধু হতে পারে।

বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এই সফরের আগে ডাইনেসের দপ্তর জানায়, তিনি হোয়াইট হাউসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করছেন এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডা’র বিষয়টি তুলে ধরবেন। শুল্ক যখন একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় ছিল, তখন ডাইনেস ট্রাম্প প্রশাসনের হয়ে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছিলেন।

মনটানা থেকে নির্বাচিত সিনেটর ডাইনেস, এই সপ্তাহে এক্সে দেওয়া এক বার্তায় জানান, তিনি চীনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফেনটানিলের উৎপাদন ও বিতরণ বন্ধ করা এবং ‘ বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস করা ও মন্টানার কৃষক, খামারি এবং উৎপাদকদের জন্য ন্যায্য বাজার নিশ্চিত করার’ বিষয়ে আলোচনা করবেন।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের কয়েক মাস পর, বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর চীনও এর জবাবে মার্কিন কৃষি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে, ফেনটানিলের উৎপাদন বন্ধ করতে চীন যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি।

উল্লেখ্য, ফেনটানিল হলো একটি শক্তিশালী মাদক, যা যুক্তরাষ্ট্রে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী।

এর প্রতিক্রিয়ায়, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এই মাসের শুরুতে ওয়াশিংটনকে অভিযুক্ত করে বলেন, তারা ‘ভালোর সঙ্গে খারাপের আচরণ করছে’ এবং যুক্তরাষ্ট্র ‘স্বেচ্ছাচারী শুল্কের’ জবাব দিতে চীনও ব্যবস্থা নেবে।

ফেনটানিলের অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে চীনের নেওয়া পদক্ষেপগুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বেইজিং। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র গত বছর থেকে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য একাধিক উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক করেছে এবং দেশটির মাদক নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো নিয়মিতভাবে মার্কিন ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির সঙ্গে আলোচনা করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চীন সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে ‘ফেনটানিল-সংক্রান্ত বিষয়গুলোর অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ নিষেধাজ্ঞা এবং চীনের ওপর অযৌক্তিক চাপ প্রয়োগের’ বিরোধিতা করে।

ডাইনেস বৃহস্পতিবার বেইজিং পৌঁছান এবং চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাওশুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। চীন সফরের আগে তিনি ভিয়েতনাম সফর করেন এবং সেখানকার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *