প্রয়াত কিটি ডুকাকিস: শোকের ছায়া, প্রাক্তন গভর্নরের স্ত্রীর জীবনাবসান

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক গভর্ণর ও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মাইকেল ডুকাকিসের স্ত্রী কিটি ডুকাকিস ৮৮ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা ও মাদকাসক্তির সঙ্গে লড়াই করেছেন এবং তা নিয়ে সবসময় খোলামেলা কথা বলেছেন।

তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার রাতে ব্রুকলিনে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

কিটি ডুকাকিসের ছেলে জন ডুকাকিস শনিবার টেলিফোনে জানান, তার মা পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে তুলতে চেয়েছিলেন এবং অন্যদের তাদের দুর্বলতাগুলো মোকাবেলা করতে সাহায্য করতে সবসময় প্রস্তুত ছিলেন।

পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, “তিনি ছিলেন ভালোবাসাময়, আবেগপ্রবণ এবং আনন্দময়ী। সকল স্তরের মানুষের প্রতি তার গভীর সংবেদনশীলতা ছিল। আমাদের বাবা মাইকেল ডুকাকিসের সঙ্গে তার ৬০ বছরের বেশি সময়ের একটি অসাধারণ সম্পর্ক ছিল এবং তারা একে অপরকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন।”

১৯৮৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে স্বামীর প্রচারণায় কিটি ডুকাকিসের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে স্বামীর জন্য ভোট চেয়েছেন। এমনকি, তাকে প্রেসিডেন্টের পদে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

১৯৮৮ সালের এক প্রেসিডেন্ট বিতর্কের শুরুতে একটি প্রশ্ন ছিল, “গভর্ণর, যদি কিটি ডুকাকিসকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হতো, তাহলে আপনি কি খুনীর জন্য মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করতেন?” ডুকাকিস এর উত্তরে বলেছিলেন যে তিনি তা সমর্থন করবেন না। তার এই আবেগহীন উত্তর ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল।

১৯৮৭ সালে কিটি ডুকাকিস জানান, তিনি ২৬ বছর ধরে অ্যাম্ফিটামিন-এর নেশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি জানান, ১৯ বছর বয়স থেকে তিনি ওজন কমানোর ওষুধ গ্রহণ করা শুরু করেছিলেন।

তার স্বামী মাদকবিরোধী বিষয়টিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেন এবং কিটি ডুকাকিস মাদক ও অ্যালকোহলের অপকারিতা সম্পর্কে তরুণদের সচেতন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

তবে, ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে মাইকেল ডুকাকিস জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশের কাছে পরাজিত হওয়ার কয়েক মাস পর কিটি ডুকাকিস অ্যালকোহল আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে ৬০ দিনের একটি চিকিৎসা গ্রহণ করেন।

কয়েক মাস পর তিনি আবার মদ্যপান শুরু করেন এবং রাবিং অ্যালকোহল পান করার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন।

১৯৯০ সালে প্রকাশিত তার আত্মজীবনী ‘নাও ইউ নো’-তে তিনি তার মা’কে মাদক ও অ্যালকোহল আসক্তির জন্য দায়ী করেন এবং আত্ম-অনুভূতি কম থাকার পেছনেও তার মায়ের প্রভাব ছিল বলে উল্লেখ করেন।

২০০৬ সালে প্রকাশিত তার আরেকটি বই ‘শক’-এ তিনি ২০০১ সাল থেকে নিয়মিতভাবে ইলেক্ট্রো-কনভালসিভ থেরাপি (ইসিটি) নেওয়ার মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির কথা জানান।

তিনি লেখেন, এই চিকিৎসা তার জন্য “নতুন এক বাস্তবতার দ্বার খুলে দিয়েছে”।

বর্তমান ম্যাসাচুসেটস-এর গভর্ণর মাউরা হিলি কিটি ডুকাকিসকে “জনজীবনে এবং পর্দার আড়ালে ভালো কাজের একজন শক্তি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তিনি হলোকস্ট যাতে কোনোদিনও ভোলা না যায়, সেই বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং শিশু, নারী ও শরণার্থীদের অধিকারের জন্য কাজ করেছেন।

গভর্ণর হিলি এক বিবৃতিতে বলেছেন, “তিনি মাদকাসক্তি এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক তার সংগ্রামের কথা সাহসের সঙ্গে বলেছেন, যা আমাদের সবার জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ এবং কুসংস্কার ভেঙে সাহায্য চাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়।”

ম্যাসাচুসেটস-এর অ্যাটর্নি জেনারেল আন্দ্রেয়া জয় ক্যাম্পবেল সামাজিক মাধ্যমে এক বিবৃতিতে বলেছেন, কিটি ডুকাকিস তার ব্যক্তিগত দুঃখকষ্টকে অন্যদের সাহায্য করার কাজে লাগিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, “তিনি যে নীতি তৈরিতে সাহায্য করেছেন এবং যারা তাদের নিজেদের সত্য কথা বলতে অনুপ্রাণিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে তার স্মৃতি চিরকাল বেঁচে থাকবে।”

নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির পলিসি স্কুলের পরিচালক মারিয়া ইভানোভা বলেছেন, কিটি ডুকাকিস তার সংগ্রামের কথা প্রকাশ্যে এনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এবং গৃহহীন ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সমর্থন জুগিয়েছেন।

এই স্কুল ‘কিটি ও মাইকেল ডুকাকিস সেন্টার ফর আর্বান অ্যান্ড রিজিওনাল পলিসি’-র স্বাগতিক।

ইভানোভা বলেন, “কিটি ডুকাকিস জনজীবনে সততা, সহানুভূতি এবং শক্তি এনেছিলেন।

তার উত্তরাধিকার সেবা, স্থিতিশীলতা এবং সত্যকথনের দৃষ্টান্ত।”

জানা যায়, কিটি ডুকাকিস এবং তার স্বামী ম্যাসাচুসেটস-এর ব্রুকলিনের একটি হাই স্কুলে পড়ার সময় পরিচিত হন। ব্রুকলিন, বোস্টন শহরের একটি উপশহর।

তারা ১৯৬৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

কিটি’র আগের পক্ষের একটি সন্তান ছিল। তাদের ঘরে আরো দুটি সন্তান আসে, আন্দ্রেয়া এবং কারা।

কিটি ডুকাকিসের বাবা হ্যারি এলিস ডিকসন ছিলেন বোস্টন সিম্ফনি অর্কেস্ট্রার সহযোগী কন্ডাক্টর।

তিনি আধুনিক নৃত্য এবং সম্প্রচার বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৮৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর বুশ তাকে ইউনাইটেড স্টেটস হলোকস্ট মেমোরিয়াল কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন।

এর আগে তিনি ১৯৭৯ সালে প্রেসিডেন্টের হলোকস্ট বিষয়ক কমিশনে এবং শরণার্থী নীতি গ্রুপের পরিচালনা পর্ষদে দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়াও তিনি কম্বোডিয়ান শিশুদের বিষয়ক টাস্ক ফোর্সেরও সদস্য ছিলেন।

নব্বই দশকের শেষের দিকে কিটি ডুকাকিস এবং তার স্বামী ম্যাসাচুসেটস ও ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্যে সময় কাটাতেন।

ক্যালিফোর্নিয়ায় তিনি একজন সমাজকর্মী ছিলেন এবং তার স্বামী ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস-এ অধ্যাপনা করতেন।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *