খেলার জগৎ: আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) নতুন সভাপতি হিসেবে কির্স্টি কোভেন্ট্রি, কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে।
সাতবারের অলিম্পিক পদক জয়ী সাঁতারু, কির্স্টি কোভেন্ট্রি, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (International Olympic Committee – আইওসি) নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিতে চলেছেন। খেলাধুলার জগতে ১৯৮০-এর দশকে অনুষ্ঠিত মস্কো এবং লস অ্যাঞ্জেলেস গেমসের সময় যে অস্থিরতা দেখা গিয়েছিল, কোভেন্ট্রিকে এখন সেই রকমই কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।
আগামী জুন মাস থেকে তিনি টমাস বাখের স্থলাভিষিক্ত হবেন। তাঁর সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কি কি?
প্রথমেই আসে নারী ক্রীড়াবিদদের অধিকার রক্ষার বিষয়টি। কোভেন্ট্রি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, নারী ক্রীড়া এবং ক্রীড়াবিদদের সুরক্ষা দেওয়া তাঁর প্রধান লক্ষ্য।
জিম্বাবুয়ের ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় তিনি নারী রেফারীদের যৌন হয়রানির অভিযোগের ভিত্তিতে দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের বোর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন। ট্রান্সজেন্ডার (transgender) ক্রীড়াবিদদের নারী বিভাগে অংশগ্রহণের বিষয়েও তিনি একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে চান।
তাঁর মতে, নারী ক্রীড়া রক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা বাড়ছে এবং এটা পরিষ্কার যে, ট্রান্সজেন্ডার নারীরা নারী বিভাগে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নারীদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে পারে।
প্যারিসে অনুষ্ঠিত নারী বক্সিং টুর্নামেন্টে ইমান খেলিফ এবং লিন ইউ-টিংয়ের স্বর্ণপদক জয় এই বিতর্কের জন্ম দেয়। কোভেন্ট্রি এই বিষয়ে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স (taskforce) গঠনের কথা ভাবছেন, যারা নারী ক্রীড়া রক্ষার উপায় নিয়ে কাজ করবে।
এরপর আসে রাশিয়ার অংশগ্রহণের বিষয়টি। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে চারটি আঞ্চলিক ক্রীড়া কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণ এখনো রাশিয়ার হাতে।
এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার অলিম্পিক কমিটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কোনো সুস্পষ্ট উপায় নেই। তবে, কোভেন্ট্রি মনে করেন, দেশগুলোকে অলিম্পিক গেমস থেকে নিষিদ্ধ করা উচিত নয়।
তিনি রাশিয়া বিষয়ক একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যারা রাশিয়ার অংশগ্রহণের জন্য কিছু নিয়ম তৈরি করবে। বর্তমানে, রাশিয়ার কিছু ক্রীড়াবিদ নিরপেক্ষ (neutral) খেলোয়াড় হিসেবে মিলান-কর্টিনা শীতকালীন অলিম্পিকে অংশ নিতে পারবে।
তবে, ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তির জন্য রাশিয়াকে ফেরানোর কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
রাজনৈতিক অস্থিরতাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) সময়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।
ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস গেমসের চেয়ারম্যান কেসি ওয়াটারম্যান (Casey Wasserman) জানিয়েছেন, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আমেরিকা সকল দেশের ক্রীড়াবিদদের স্বাগত জানাবে।
কোভেন্ট্রি জানিয়েছেন, তিনি কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। তিনি বলেন, “আমি ২০ বছর বয়স থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কঠিন মানুষদের সামলে এসেছি। আমরা আমাদের নীতিতে অটল থাকব।
সংহতি বজায় রাখব এবং নিশ্চিত করব অলিম্পিক গেমসে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জনকারী প্রত্যেক ক্রীড়াবিদ যেন নিরাপদে গেমসে অংশ নিতে পারে।”
২০৩৬ সালের অলিম্পিক গেমসের আয়োজক নির্বাচনও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারত, কাতার, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চাইছে।
শোনা যাচ্ছে, কোভেন্ট্রি বাখের নীতি অনুসরণ করে পছন্দের দেশকে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভারতের সম্ভাবনা বেশি।
কারণ, কোভেন্ট্রি প্রভাবশালী আইওসি সদস্য নিতা আম্বানির (Nita Ambani) খুব ঘনিষ্ঠ, যিনি এশিয়ার সবচেয়ে ধনী পরিবারের সদস্য। যদিও এখনো সময়সীমা ঘোষণা করা হয়নি, তবে কোভেন্ট্রি জানিয়েছেন, তিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় আইওসি সদস্যদের আরও বেশি যুক্ত করবেন।
জলবায়ু পরিবর্তনও (climate crisis) একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের সময় জুলাই-আগস্ট মাস সাধারণত খেলার জন্য উপযুক্ত থাকে।
কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই সময়েও অনেক জায়গায় তাপমাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠছে। টোকিও ২০২০-এর ম্যারাথন প্রতিযোগিতা সাপোরোতে আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে কম ছিল।
২০৩৬ সালের গেমস ভারতে এবং সম্ভবত ২০৪০ সালের গেমস সৌদি আরবে (Saudi Arabia) অনুষ্ঠিত হতে পারে, যেখানে আবহাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।
কোভেন্ট্রি জানিয়েছেন, ২০৩৬ এবং ২০৪০ সালের গেমসের জন্য নতুন অঞ্চলের আগ্রহ বাড়ছে এবং গেমসের সময় পরিবর্তনের বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।
গণমাধ্যম এবং বিনোদনের জগতে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে অলিম্পিক গেমসের প্রাসঙ্গিকতা টিকিয়ে রাখাটাও জরুরি। প্যারিস গেমস (Paris Games) সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
সম্প্রতি এনবিসি (NBC) ২০৩৬ সাল পর্যন্ত অলিম্পিক গেমসের সম্প্রচার স্বত্ব ৩ বিলিয়ন ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) বাড়িয়েছে।
কোভেন্ট্রির জন্য আগামী আট বছরে নতুন শীর্ষস্থানীয় পৃষ্ঠপোষক সংগ্রহ করা এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গেমসের আকর্ষণ ধরে রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।