যুক্তরাষ্ট্র সরকার তালিবান নেতা সিরাজউদ্দিন হক্কানির গ্রেপ্তারে সহায়তার জন্য ধার্যকৃত ১ কোটি মার্কিন ডলারের পুরস্কার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। শনিবার আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তবে, ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এখনো তাদের ওয়েবসাইটে হক্কানির জন্য পুরস্কারের ঘোষণাটি বহাল রেখেছে। এফবিআই বলছে, হক্কানি “আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও জোট বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্তঃসীমান্ত হামলায় সমন্বয় ও অংশগ্রহণের” সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হলো, যখন তালিবান গত বৃহস্পতিবার একজন মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে। জর্জ গ্লেজম্যান নামের ওই ব্যক্তি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে পর্যটকদের মতো ঘুরতে গিয়ে অপহৃত হয়েছিলেন।
জানুয়ারি মাস থেকে এই নিয়ে তৃতীয়বার কোনো মার্কিন বন্দীকে মুক্তি দিল তালিবান। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে গ্লেজম্যানের মুক্তিকে “ইতিবাচক ও গঠনমূলক পদক্ষেপ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি এই মুক্তি প্রক্রিয়া সুগম করতে সহায়তার জন্য কাতারকে ধন্যবাদ জানান। তালিবান ইতিপূর্বে মার্কিন বন্দীদের মুক্তিকে তাদের আন্তর্জাতিক “স্বাভাবিকীকরণের” প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই তালিবান আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে আছে। কোনো দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি, যদিও বেশ কয়েকটি দেশ এখনো সেখানে তাদের কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
আফগানিস্তানে তালিবানের ক্ষমতা দখলের সময় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন দেশটির সেনা প্রত্যাহারের তদারকি করছিল। এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই সেনা প্রত্যাহারের রূপরেখা তৈরি করে।
ট্রাম্প ২০২০ সালে তালিবানের সঙ্গে আলোচনা করে আফগানিস্তান যুদ্ধ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং ১৪ মাসের মধ্যে মার্কিন সেনা ও মিত্র বাহিনী প্রত্যাহারের বিষয়ে রাজি হয়েছিলেন। তবে, এই চুক্তিতে পশ্চিমা সমর্থিত আফগান সরকারকে অন্তর্ভুক্ত না করায় এটি বিতর্কিত হয়, যা ২০২১ সালে দেশটির বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত হয়।
হাক্কানি, যিনি সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের একজন খ্যাতিমান কমান্ডারের পুত্র, কুখ্যাত হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র এই সংগঠনটিকে “সন্ত্রাসী গোষ্ঠী” হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে এবং এটিকে আফগানিস্তানের অন্যতম বিপজ্জনক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আত্মঘাতী বোমা হামলার জন্য কুখ্যাত এই নেটওয়ার্কটি কাবুলে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেছে বলে ধারণা করা হয়। হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে শীর্ষ আফগান কর্মকর্তাদের হত্যা এবং পশ্চিমা নাগরিকদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া মার্কিন সেনা বোউ বার্গডালও এদের হাতে বন্দী ছিলেন। তালিবান ক্ষমতা দখলের পরও হক্কানি যুক্তরাষ্ট্রের নজরে ছিলেন।
২০২২ সালে কাবুলে এক ড্রোন হামলায় আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহত হন। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, জাওয়াহিরি যে বাড়িতে নিহত হয়েছিলেন, সেটি হাক্কানির ছিল।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা