হংকং সেভেনস: ঝলমলে স্টেডিয়ামে কতটা জমবে খেলা?

হংকং রাগবি সেভেনস: এক নতুন আঙ্গিনায় খেলার উন্মাদনা, আগের মতোই কি বজায় থাকবে?

হংকং-এর রাগবি সেভেনস টুর্নামেন্ট, যা এক সময়ে ছিল এশিয়ার অন্যতম আকর্ষণীয় ক্রীড়া আসর, এবার স্থানান্তরিত হতে যাচ্ছে এক অত্যাধুনিক স্টেডিয়ামে। ১৯৮২ সাল থেকে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হওয়া এই টুর্নামেন্টটি হংকং স্টেডিয়ামে দর্শকদের মন জয় করে আসছিল। গগনচুম্বী অট্টালিকা আর সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মাঝে, শহরের রাতের ঝলমলে জীবনের খুব কাছেই ছিল এই স্টেডিয়ামটি।

রাগবি প্রেমীদের জন্য হংকং সেভেনস যেন ছিল এক উৎসবের মতো।

বিশ্বজুড়ে রাগবি খেলোয়াড় এবং অনুরাগীরা এই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে আসে। রাগবি সেভেনস, রাগবি ইউনিয়নের একটি সংক্ষিপ্ত এবং দ্রুতগতির সংস্করণ, যা মূল খেলার চেয়ে অনেক বেশি উত্তেজনাপূর্ণ। নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ফিজির মতো শক্তিশালী দলগুলো এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।

খেলাধুলা ছাড়াও, এই টুর্নামেন্টের আকর্ষণীয় দিক হলো এর উৎসবের আমেজ। সিঙ্গাপুরের গ্র্যান্ড প্রিক্স এবং অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মতো, হংকং সেভেনসও পর্যটক এবং ব্যবসায়ীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

কিন্তু এবার প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন। হংকং দ্বীপের কেন্দ্রস্থলে চার দশকের বেশি সময় ধরে এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার পর, এটি এখন স্থানান্তরিত হচ্ছে কাওলুন উপদ্বীপের একটি নতুন, আকর্ষণীয় স্টেডিয়ামে। এখানে তৈরি হয়েছে অত্যাধুনিক কাই তাক স্পোর্টস পার্ক, যেখানে রয়েছে প্রায় ৫০,০০০ দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি স্টেডিয়াম। এই বিশাল কমপ্লেক্সটি হংকংয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ, এটি শহরের অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের একটি অংশ।

হংকংয়ের এই নতুন স্টেডিয়ামটি শুধু খেলার মাঠ নয়, এটি যেন এক অত্যাশ্চর্য স্থাপত্যের নিদর্শন। এর ডিজাইন দর্শকদের খেলার অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করবে।

নতুন স্টেডিয়ামটি পুরনোটির চেয়ে অনেক বেশি প্রশস্ত, আধুনিক এবং আকর্ষণীয়। তবে এটি শহরের কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত।

নতুন স্টেডিয়ামটি রাগবি খেলার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হলো মাঠের ভেতরের তীব্র এবং উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা। শব্দ ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে স্টেডিয়ামটিতে একটি বিশেষ ছাদ তৈরি করা হয়েছে, যা খেলা চলাকালীন সময়ে বন্ধ করে দেওয়া হবে, যাতে দর্শকদের হর্ষধ্বনি স্টেডিয়ামের ভেতরেই আবদ্ধ থাকে।

পুরনো স্টেডিয়ামের ‘সাউথ স্ট্যান্ড’-এর উন্মাদনা ছিল দেখার মতো। এখানে দর্শকরা বিভিন্ন ধরণের পোশাকে সজ্জিত হয়ে আসতেন। খেলা শেষে সবাই মিলে শহরের বিভিন্ন বারে গিয়ে আনন্দ করত, যা এই টুর্নামেন্টের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।

নতুন স্টেডিয়ামে সেই সাউথ স্ট্যান্ডের আদলে একটি বিশেষ এলাকা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে আগের মতোই দর্শকদের বসার ব্যবস্থা থাকবে।

নতুন স্টেডিয়ামে খেলার পাশাপাশি বিভিন্ন কনসার্টেরও আয়োজন করা হবে। এখানে ‘এশিয়ার দীর্ঘতম বার’ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে খেলা চলাকালীন সময়ে পানীয় পরিবেশন করা হবে।

তবে অনেকের মনে প্রশ্ন, নতুন এই স্টেডিয়ামে আগের মতো সেই উৎসবের আমেজ বজায় থাকবে কিনা।

হংকংয়ের রাগবি সেভেনস টুর্নামেন্ট কেবল মাঠের খেলা নয়, মাঠের বাইরের আনন্দটাও এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। খেলা শেষে সবাই মিলেমিশে বারগুলোতে যাওয়াটা একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা তৈরি করত।

নতুন স্টেডিয়ামে সেই সুযোগ কতটা থাকবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

সবকিছু বিবেচনা করে, এটা বলা যায় যে হংকং রাগবি সেভেনস তার প্রায় অর্ধ-শতাব্দীর পুরোনো ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলেছে। নতুন স্টেডিয়ামে খেলার এই উন্মাদনা কতটা বজায় থাকে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *