ডায়াবেটিস (Diabetes) আক্রান্ত ব্যক্তিদের লিভার ও প্যানক্রিয়াসের (pancreas) ক্যান্সার (cancer) হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি, সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গেছে। বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে এই ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
ব্রিটেনের (Britain) স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করে এই গবেষণা চালানো হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস (Type 2 diabetes) হয়েছে, তাদের মধ্যে প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ এবং লিভারের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় পাঁচগুণ বেশি।
এমনকি পুরুষদের ক্ষেত্রেও এই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
যাদের ডায়াবেটিস সবে ধরা পড়েছে, তাদের মধ্যে প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৭৫ শতাংশ এবং লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় চারগুণ বেড়ে যায়।
অন্ত্রের ক্যান্সারের (bowel cancer) ক্ষেত্রেও ঝুঁকি কিছুটা বাড়ে।
ডায়াবেটিস আছে এমন মহিলাদের মধ্যে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি ৩৪ শতাংশ এবং পুরুষদের মধ্যে ২৭ শতাংশ বেশি।
ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টারের (University of Manchester) অধ্যাপক অ্যান্ড্রু রেনেহানের (Andrew Renehan) সঙ্গে এই গবেষণা করেছেন মেডিকেল শিক্ষার্থী ওয়েন টিপিং (Owen Tipping)। তিনি জানান, “ডায়াবেটিস এবং অতিরিক্ত ওজন উভয়ই ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণ।
আমাদের গবেষণা ডায়াবেটিসের কারণে ক্যান্সার হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছে, যা অতিরিক্ত ওজনের প্রভাব থেকে আলাদা।” এর আগে, অতিরিক্ত ওজনের সঙ্গে ১৩ ধরনের ক্যান্সারের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে।
তাদের মধ্যে অনেকগুলোই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
তবে, ডায়াবেটিস নিজে কতখানি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, তা নিয়ে এতদিন স্পষ্ট ধারণা ছিল না।
গবেষণার জন্য গবেষকরা ইউকে বায়োব্যাঙ্কের (UK Biobank) তথ্য ব্যবহার করেছেন।
এই বায়োব্যাঙ্কে পাঁচ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার তথ্য সংরক্ষিত আছে।
তারা ২৩,৭৫০ জন নতুন ডায়াবেটিস রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করেন এবং তাদের তথ্য ৭০,০০০ জনের বেশি সুস্থ মানুষের সঙ্গে তুলনা করেন।
ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পরপরই ক্যান্সার শনাক্তের সংখ্যা বাড়ে, কারণ রোগীরা তখন বেশি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।
তাই গবেষকরা ডায়াবেটিস শনাক্ত হওয়ার এক বছরের মধ্যে ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার ঘটনাগুলো হিসাবের বাইরে রেখেছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস শনাক্ত হওয়ার পাঁচ বছর পর, ডায়াবেটিস নেই এমন মানুষের তুলনায়, ডায়াবেটিস আছে এমন পুরুষদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজনের কারণে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৪৮ শতাংশ বেশি।
নারীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি ২৪ শতাংশ বেশি।
তবে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারীদের মধ্যে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার (endometrial cancer) বা মেনোপজের (menopause) পরবর্তী স্তন ক্যান্সারের (breast cancer) ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি ছিল না।
গবেষণাটি আগামী মে মাসে স্পেনের মালাগায় (Málaga) অনুষ্ঠিতব্য ইউরোপীয় কংগ্রেসে (European Congress) উপস্থাপন করা হবে।
যুক্তরাজ্যে লিভার ও প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সারের ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বেশি।
প্রতি ৭৬ জন পুরুষের মধ্যে ১ জনের এবং ১৩০ জন নারীর মধ্যে ১ জনের লিভার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অন্যদিকে, প্রতি ৫৫ জন পুরুষের মধ্যে ১ জন এবং ৫৯ জন নারীর মধ্যে ১ জনের প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার হতে পারে।
ওয়েন টিপিং বলেন, “ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্যান্সার স্ক্রিনিং (screening) উপকারী হবে কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
তবে, প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার (pancreas cancer) দ্রুত শনাক্ত করা জরুরি।”
ডায়াবেটিস কীভাবে ক্যান্সার সৃষ্টি করে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ইনসুলিনের (insulin) উচ্চ মাত্রা, উচ্চ রক্তে শর্করার পরিমাণ এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ এর কারণ হতে পারে।
হরমোনের (hormone) মাত্রা, ইনসুলিনের প্রতি শরীরের সংবেদনশীলতা বা শরীরের চর্বির ভিন্নতার কারণে নারী ও পুরুষের মধ্যে এই ঝুঁকির পার্থক্য হতে পারে।
ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে-র (Cancer Research UK) সোফিয়া লোয়েস (Sophia Lowes) বলেন, “এই গবেষণা ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস কীভাবে ক্যান্সার সৃষ্টি করে, সে বিষয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
তবে, এ ধরনের গবেষণা রোগ প্রতিরোধের (prevention), শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত ওজন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করাও জরুরি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান (The Guardian)।