হাঙ্গেরিতে এলজিবিটিকিউ+ অধিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা: লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার!

হাঙ্গেরিতে সমকামীদের অধিকার বিষয়ক এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায়, দেশটির সরকার সম্প্রতি প্রাইড ইভেন্ট নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। একই সাথে, সরকার এই ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের শনাক্ত করতে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে, যা মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ইতিমধ্যেই রাস্তায় নেমে এসেছেন অধিকার কর্মীরা। তারা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞা তাদের কণ্ঠরোধ করার একটি অপচেষ্টা।

হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সরকার এই পদক্ষেপকে সমর্থন করে জানিয়েছে, শিশুদের সুরক্ষার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি আসলে এলজিবিটিকিউ+ (LGBTQ+) সম্প্রদায়ের অধিকার খর্ব করার একটি কৌশল।

তারা মনে করেন, সরকার ভিন্নমত দমন করতে চাইছে এবং এর মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে।

নতুন এই আইনের ফলে, বুদাপেস্ট প্রাইড-এর মতো বার্ষিক অনুষ্ঠানগুলো এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। প্রতিবাদকারীরা ঘোষণা করেছেন, তারা এই ‘ফ্যাসিবাদী নিষেধাজ্ঞার’ বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন।

বুদাপেস্টের মেয়রও জানিয়েছেন, তারা আয়োজকদের সাথে মিলে এই বছর অনুষ্ঠানটি কিভাবে করা যায়, সেই বিষয়ে একটি সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।

এই নিষেধাজ্ঞার কারণে হাঙ্গেরিতে বসবাস করা অনেক এলজিবিটিকিউ+ ব্যক্তির মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন, যিনি নিজেকে ‘গর্বিত গে’ হিসেবে পরিচয় দেন, বলেছেন, নতুন আইন এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখা কঠিন করে তুলেছে।

এই পরিস্থিতিতেও, অনেকে মনে করেন, নিজেদের অধিকারের জন্য একত্রিত হওয়া এবং প্রতিবাদ জানানো জরুরি।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শুধু হাঙ্গেরির অভ্যন্তরে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই আইন মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরাও এর নিন্দা জানিয়েছেন। তাদের মতে, হাঙ্গেরির সরকার কয়েক দশক আগের একটি অন্ধকার যুগে দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে।

ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টিও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর নজরদারি বাড়বে, যা তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারকে খর্ব করবে।

এছাড়াও, এই প্রযুক্তি অনেক সময় ভুল শনাক্তকরণ করতে পারে, যা সংখ্যালঘুদের জন্য আরো বেশি সমস্যার সৃষ্টি করবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাঙ্গেরির সরকার সম্ভবত ডানপন্থী ভোটারদের সমর্থন লাভের জন্য এই ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। নির্বাচনের আগে এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।

সব মিলিয়ে, হাঙ্গেরির এই পদক্ষেপ দেশটির এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের জন্য একটি কঠিন সময় নিয়ে এসেছে। অধিকার কর্মীরা বলছেন, তারা তাদের লড়াই চালিয়ে যাবেন এবং সরকারের এই অন্যায্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *