চার্লট চার্চ: শিশুশিল্পী থেকে প্রকৃতিপ্রেমী, সংবাদপত্রের চাপ থেকে মুক্তি।
ওয়েলসের শিল্পী চার্লট চার্চ, যিনি একসময় ছিলেন গানের জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, বর্তমানে প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটানোকেই বেশি গুরুত্ব দেন। তাঁর জীবনের এই নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে ২০২৩ সালে, যখন তিনি ‘দ্য ড্রিমিং’ নামের একটি কেন্দ্র খোলেন।
এটি প্রকৃতির কোলে শান্তিতে সময় কাটানোর একটি আশ্রয়স্থল, যেখানে মানুষজন মানসিক শান্তির জন্য আসেন। চার্চের এই জীবন পরিবর্তনের গল্প অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা জোগায়।
ছোটবেলায় চার্চের খ্যাতি আসে যখন তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। তাঁর অ্যালবামগুলো বিশ্বজুড়ে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়।
কিন্তু খ্যাতির সঙ্গে আসে সংবাদমাধ্যমের বাড়াবাড়ি। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনেক ভুল তথ্য পরিবেশন করা হতো, যা তাঁর জন্য ছিল খুবই কষ্টের। তিনি বলেন, “সংবাদপত্রের এই চাপ আমাকে অনেক ভুগিয়েছে।”
চার্চ জানান, তাঁর শিল্পীসত্তাকে যেন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সেই কঠিন সময়ে তিনি নিজেকে গুটিয়ে নেন এবং নিজের সৃজনশীলতাকে নতুন করে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।
২০২০ সালে, চার্চ যখন তাঁর নতুন সন্তানের সঙ্গে ছিলেন, তখন তিনি ওয়েলসের একটি পুরনো বাড়ি দেখেন, যা লরা অ্যাশলের (Laura Ashley) এক সময়ের বাসভবন ছিল।
প্রথমে বাড়িটি তাঁর কেনার সামর্থ্য ছিল না, কিন্তু পরে তিনি ঐ জায়গাটিতে একটি শিক্ষামূলক কেন্দ্র ও পরিবারের অবকাশ যাপনের স্থান তৈরির পরিকল্পনা করেন।
চার্চ জানান, প্রকৃতির কাছাকাছি আসার এই অনুভূতি তাঁকে এক নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছে। তিনি অনুভব করেন, প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গেলে মন শান্ত হয় এবং জীবনের আসল উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
বর্তমানে ‘দ্য ড্রিমিং’-এ বিভিন্ন ধরনের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মানুষজন যোগা, প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটানো এবং নিজেদের দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আসে।
চার্চ নিজেও এই কেন্দ্রে সময় কাটান এবং প্রকৃতির নীরবতা উপভোগ করেন।
চার্চ তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ নিয়েও মুখ খোলেন। তিনি বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী এবং বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তিনি মনে করেন, সমাজের ভালো করতে হলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
চার্চের শৈশব কেটেছে ওয়েলসের কার্ডিফে। তাঁর পরিবার সবসময় তাঁকে লড়াই করতে শিখিয়েছে এবং জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে ভালোবাসতে শিখিয়েছে।
তিনি বলেন, “আমার পরিবার আমাকে শিখিয়েছিল, কীভাবে প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়।”
ছোটবেলায় চার্চের গানের প্রতি ভালোবাসা ছিল এবং তিনি সবসময় সঙ্গীতের সঙ্গেই থাকতে চেয়েছেন। তাঁর মতে, সঙ্গীত মানুষকে আনন্দ দেয় এবং জীবনের গভীরতা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
সংবাদপত্রের চাপ ও ব্যক্তিগত জীবনের নানা ঘটনার কারণে চার্চ একসময় হতাশ হয়ে পড়েন। তাঁর মা মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ তাঁকে আরও বেশি আঘাত দেয়।
তবে চার্চ এসব প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠেছেন। তিনি এখন তাঁর জীবনকে নতুনভাবে সাজিয়েছেন এবং প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে শান্তি খুঁজে পান।
চার্চ বর্তমানে তাঁর নতুন অ্যালবাম তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যা সম্ভবত ২০২৬ সালে প্রকাশিত হবে। এই অ্যালবামে প্রকৃতি, নিরাময় এবং ভালোবাসার বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে।
চার্চ মনে করেন, সঙ্গীতের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে গভীর অনুভূতি তৈরি করা সম্ভব।
চার্চের এই নতুন জীবনযাত্রা অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণা। তিনি প্রমাণ করেছেন, জীবনের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে কীভাবে নিজের স্বপ্ন পূরণ করা যায়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান