রমজানে যাকাত: ছবিসহ সহজ ভাষায়, ৭টি জরুরি প্রশ্নের উত্তর!

রমজান মাস চলছে, আর এই পবিত্র মাসে যাকাত আদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেক মুসলমান। যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। এটি কেবল একটি ধর্মীয় রীতিই নয়, বরং সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের প্রতি সাহায্যের এক গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

আসুন, যাকাত সম্পর্কে কিছু জরুরি বিষয় জেনে নেওয়া যাক, যা আমাদের জন্য জানা খুব দরকার।

যাকাত শব্দের অর্থ হলো পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। এটি সম্পদকে পবিত্র করে এবং অভাবীদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়। যারা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক, তাদের ওপর যাকাত দেওয়া ফরজ।

এই সম্পদের পরিমাণকে নিসাব বলা হয়।

কার ওপর যাকাত ফরজ?

যাদের কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে, তাদের ওপর যাকাত দেওয়া ফরজ। নিসাব হলো স্বর্ণ ও রুপার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ।

বর্তমানে (মে, ২০২৪) বাজারে এক ভরি (১১.৬৬ গ্রাম) সোনার দাম প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকার বেশি। যাকাতের নিসাব হলো সাড়ে সাত ভরি সোনা (৮৫ গ্রাম)।

রুপার ক্ষেত্রে, সাড়ে বায়ান্ন তোলা (৫৮৪ গ্রাম) রুপা অথবা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকলে যাকাত দিতে হয়। সোনা বা রুপা না থাকলে, এই মূল্যের সমপরিমাণ টাকা বা অন্য সম্পদ থাকলেও যাকাত দিতে হবে।

এছাড়াও, ব্যবসার মালামাল, সঞ্চয়, শেয়ার বাজার-এ বিনিয়োগ করা অর্থ—এগুলোও যাকাতের হিসাবের অন্তর্ভুক্ত।

যাকাতের পরিমাণ কত?

যাকাতের হার হলো মোট সম্পদের আড়াই শতাংশ (২.৫%)। উদাহরণস্বরূপ, আপনার যদি যাকাতযোগ্য ১ লক্ষ টাকা থাকে, তাহলে আপনাকে ২,৫০০ টাকা যাকাত দিতে হবে।

যাকাত কাদের দেওয়া যায়?

আল-কোরআনে যাকাত পাওয়ার যোগ্য আট শ্রেণির মানুষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে:

  1. গরিব ও অভাবগ্রস্ত মানুষ।
  2. যারা ঋণগ্রস্ত, ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য নেই।
  3. যাদের মুক্তিপণ দেওয়ার সামর্থ্য নেই, এমন ক্রীতদাস।
  4. যাকাত আদায়ের কাজে নিযুক্ত কর্মচারী।
  5. ইসলাম গ্রহণকারী নওমুসলিম।
  6. মুসাফির বা অসহায় পথিক।
  7. আল্লাহর পথে উৎসর্গীকৃত ব্যক্তি।
  8. যুদ্ধবন্দী বা ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি।

কাদের যাকাত দেওয়া যায় না?

যাকাত নিজের মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি, স্ত্রী-সন্তানকে দেওয়া যায় না। এছাড়া, যারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, তাদেরও যাকাত দেওয়া যাবে না।

যাকাত দেওয়ার সময় কখন?

যাকাত দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। তবে, রমজান মাসে যাকাত দেওয়া উত্তম। এছাড়াও, কারো কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর ধরে থাকলে, সেই বছর শেষে যাকাত দেওয়া ফরজ হয়।

একে ‘হাওল’ বলা হয়।

যাকাতের গুরুত্ব

যাকাত শুধু একটি আর্থিক ইবাদত নয়, এটি সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠারও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। যাকাতের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সাহায্য হয়, যা সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

বাংলাদেশে অনেক ইসলামিক ব্যাংক ও দাতব্য সংস্থা যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণের কাজ করে থাকে। আপনি আপনার যাকাত তাদের মাধ্যমে অথবা সরাসরি গরিব ও অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করতে পারেন।

যাকাতের হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে স্থানীয় আলেম বা ইসলামিক স্কলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *