আজ থেকে পাঁচ বছর আগে, ২০২০ সালের মার্চ মাস, বিশ্বজুড়ে এক গভীর অনিশ্চয়তা নেমে এসেছিল। কোভিড-১৯ নামক এক অতিমারীর প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি, সেই বিভীষিকাময় সময়ের স্মৃতিগুলো যেন আবারও চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে তৈরি হওয়া ছবি ও ভিডিওর স্লাইডশো’গুলো যেন সেই সময়ের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
লকডাউনের শুরুতে, কেমন ছিল সেই পরিস্থিতি? চারপাশে এক অজানা আতঙ্ক, রাস্তাঘাট শুনশান, দোকানগুলোতে প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব।
মাস্ক পরে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাজারে যাওয়া ছিল এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। ব্রিটেন সহ বিশ্বের অনেক দেশেই লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল, যা মানুষের জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছিল।
সেই সময়ে, যুক্তরাজ্যের ‘ডাউনিং স্ট্রিট’-এ নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং হতো, যা সেখানকার নাগরিকদের কাছে উদ্বেগের কারণ ছিল।
বাংলাদেশেও একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে সরকার ধীরে ধীরে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করে।
প্রথমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়, পরে গণপরিবহন ও অফিস-আদালত বন্ধ করে দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে লকডাউন কঠোর হতে থাকে, যার ফলে বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে এবং অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে।
স্বাস্থ্যখাতেও দেখা দেয় চরম সংকট। কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাব ছিল, সেই সাথে হাসপাতালে উপচে পড়া রোগীর চাপ দেখা যায়।
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত কাজ করে গেছেন।
লকডাউনের কঠিন দিনগুলোতেও কিছু ইতিবাচক দিক ছিল। মানুষজন একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েছিল, বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষজন একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। তবে, এই সময়ে অনেক প্রিয়জনকে হারাতে হয়েছে আমাদের, যা আজও শোকের কারণ।
এমনকি, কোভিড-১৯ এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব, যা ‘লং কোভিড’ নামে পরিচিত, তা অনেকের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
কোভিড-১৯ অতিমারী আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে গেছে। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বেড়েছে, প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে এবং মানুষজন স্বাস্থ্যখাতের গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন করে উপলব্ধি করতে শিখেছে।
এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের মানুষ যে সাহস ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
আজ, যখন আমরা সেই ভয়াবহ দিনগুলোর কথা স্মরণ করি, তখন মনে রাখতে হবে, কোভিড-১৯ এখনো অনেকের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে চলেছে। তাই, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান